এ যেন মানবতাকে পুটলিতে বেঁধে ছুঁড়ে ফেলা!

মোহাম্মদ মনজুরুল আলম | শুক্রবার , ২৯ জুলাই, ২০২২ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

‘নগরীর পাঁচলাইশ থানার জাতিসংঘ পার্কের পাশে প্রাইভেটকার থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া পুটলিতে বাঁধা একটি নবজাতক শিশুকে উদ্ধার করেছে ৬ তরুণ। গত রবিবার রাত ১০ টায় নগরীর পাঁচলাইশ থানার জাতিসংঘ পার্কের পাশে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এসময় সেখানে আড্ডা দেওয়া তরুণরা নবজাতকটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান’ (সূত্রঃ আজাদী, ২৬ জুলাই’২২)। জানা গেছে, ‘প্রত্যক্ষদর্শী ও চকবাজার থানা ছাত্রলীগ নেতা মো. সাদেক রেজাসহ ৬ বন্ধু মিলে রাতে জাতিসংঘ পার্কের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এসময় প্রাইভেটকার থেকে পুটলির মতো একটা জিনিস ছুঁড়ে ফেলা হয়। ময়লা আবর্জনা ভেবে তারা প্রথমে তেমন গুরুত্ব না দিলেও কিছুক্ষণ পর ওই স্থান থেকে নবজাতকের কান্নার শব্দ ভেসে আসায় তারা বন্ধুরা সবাই মিলে সেখানে গিয়ে পুটলিতে বাঁধা একটি নবজাতক শিশু দেখতে পান’ ।
এ জগত সংসারে নিঃসন্তান দম্পতিরা ‘মা’ এবং ‘বাবা’ ডাক শোনার জন্য আল্লাহ্‌র দরবারে, সৃষ্টিকর্তার কাছে রাত দিন চোখের পানি ফেলছেন। দেশে বিদেশে চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে অনেকে নিঃস্ব পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছেন। কেউবা ছুটছেন ফকির দরবেশ আধ্যাত্মিক গুরুর কাছে, মাজারে দরবারে মাথা ঠুকে মরছেন সন্তানের জন্য। কেউবা ছুটছেন বৈদ্য কবিরাজ হোমিওপ্যাথিকের কাছে। শুধু সন্তানের আশায়। ‘মা’ ও ‘বাবা’ ডাক শোনার জন্য। যারা নিঃসন্তান একমাত্র তাঁরাই বুঝেন সন্তান না থাকার দুঃখ। ব্যথা বেদনা হৃদয়ের হাহাকার এবং শূন্যতা। আমাদের সামাজিক মানবিক ধর্মীয় নৈতিক অবক্ষয়ের এ দুঃসময়ে কতিপয় ন্যায়-নীতি বিবর্জিত মানুষ নামের নরপিশাচরা রাতের আঁধারে ফুর্তি মজা করে অবৈধ সন্তান জন্ম দিয়ে লোক লজ্জার ভয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে যত্রতত্র। আমরা জানি না হয়ত বা কোনো গৃহকর্মীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের ফসল এ সন্তান। হয়ত বা কোনো মহিলাকে ব্লাক মেইলিং করে বা অবৈধভাবে মেলামেশা করে বা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্কের জেরে বা জোর পূর্বক ধর্ষণের ফসলকে আজ রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে। নিষ্পাপ শিশুটির তো কোনো অপরাধ নেই। কেন তাকে এ পৃথিবীতে বাঁচতে না দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হল। নিষ্পাপ শিশুটিকে নয় যেন পুরো মানবতাকে ছুঁড়ে ফেলা দেয়া হচ্ছে কখনো রাস্তায় কখনো বা ডাস্টবিনে। আমাদের সমাজে যতদিন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত না হবে। কঠোর কঠিন আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে এদেশে নারী ধর্ষণ খুন নারী নির্যাতন যৌন নিপীড়নের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বন্ধ করা যাবে না। যতদিন সমাজে মানবতা সামাজিকতা নৈতিকতার অবক্ষয় রোধ করা না যাবে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সাম্য, শান্তি, সৌজন্যতা, নীতি-নৈতিকতা, ধর্মীয় রীতিনীতি ও অনুশাসন এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত না হবে হয়ত বা ততদিন এসব অরাজকতা, নারকীয় এবং মর্মন্তুদ দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাবে না। আমাদের মনে রাখা উচিৎ একজন মানব শিশুকে নয় এ যেন মানবতাকে পুঁটলি বেঁধে ছুঁড়ে ফেলা দেয়া ফুটপাতে বা ডাস্টবিনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারসিসিজমের উত্তরণ প্রসঙ্গে
পরবর্তী নিবন্ধবৃদ্ধাশ্রম : সে এক অচিন দেশে নীরব কান্নাগাথা