এ যেন প্লাস্টিকের সাথেই আমাদের বসবাস

শেখ বিবি কাউছার | সোমবার , ৫ জুন, ২০২৩ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ‘Solutions to Plastic Pollution’ বা প্লাস্টিক দূষণ এড়ানো। প্লাস্টিক মাটির সাথে সহজে মিশে যায় না। আমরা প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক ব্যবহার করে তা যেখানে সেখানে ফেলছি। ফলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। ঘর কিংবা বাইরে চোখে প্রথমেই যা দেখি তাহলো প্লাস্টিক আর প্লাস্টিক। এ যেন প্লাস্টিকের সঙ্গেই আমাদের বসবাস। অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্ষতি এবং আশঙ্কার কারণ এই প্লাস্টিক। জীবনযাত্রা সহজ করা এই প্লাস্টিক পণ্য এখন আমাদের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিতে পরিণত হয়েছে।

আপনি কি জানেন? ১ কোটি টন প্লাস্টিক প্রতিবছর বিশ্বসমুদ্রে জমা হচ্ছে। পৃথিবীতে উৎপাদিত ১৯ কোটি টন প্লাস্টিক আবর্জনার একটি ভাসমান দ্বীপ গড়ে উঠেছে, যা বাংলাদেশের প্রায় ১১ গুণ বড়। ১০ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী প্রতিবছর প্লাস্টিক দূষণে মারা যায়। মানুষ জীবদ্দশায় গড়ে ১৮ কেজির বেশি প্লাস্টিক খাদ্যের সাথে গ্রহণ করে। ২০৫০ সালে বিশ্বসমুদ্রে প্লাস্টিকের সংখ্যা হবে মাছের থেকেও বেশি। এই ভয়াবহ খবরটি জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জার্নাল। সংস্থাটি বলছে, গত ৫০ বছরে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেড়েছে, যা আগামী ২০ বছরে এর পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে। প্রত্যেক বছর প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। সংস্থাটি আরো জানায়, প্রতি মিনিটে মানুষ যত পরিমাণ প্লাস্টিক জমা করছে, তা একটা গারবেজ ট্রাকের সমান। জানা গেছে, বর্তমানে মাছ ও প্লাস্টিকের অনুপাত ১ : ৫। ২০৩০ সালে অনুপাত হবে ১ : ৩। আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য প্লাস্টিকের বেশিরভাগই একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। নর্দমা, পুকুর, ড্রেন, নদী হয়ে ফেলে দেওয়া এসব প্লাস্টিকের সর্বশেষ গন্তব্য হয় সমুদ্র। এর ফলে পানি দূষণ ও জলাবদ্ধতার পাশাপাশি সামুদ্রিক প্রাণী ও বাস্তুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। নিঃসন্দেহে এটি জলজ প্রাণী, খাদ্য শৃঙ্খল ও সর্বোপরি মানবজাতির জন্য এক অশনিসংকেত। বাংলাদেশের প্রতিটি নদী এবং সমুদ্র তলদেশে এখন প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ পরিপূর্ণ। প্লাস্টিকের এই মাইক্রো কণা সমূহ নিয়মিত মানুষসহ অন্য প্রাণীর খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ছে, যা খুবই বিপজ্জনক। বিভিন্ন উপায়ে প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ ভয়াবহভাবে দূষিত হচ্ছে এই প্লাস্টিকের কারণে। তার সাথে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা তো আছেই। আমাদের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের অন্যতম কারণ। পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই আমাদের উচিত প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা, প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা। উন্নত দেশগুলো কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই তাদের পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে পারছে। আশার কথা হল বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে এগিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ এই বিষয়ে সব রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে বলেছে। প্লাস্টিকের দূষণ কমাতে নতুন প্রজন্মের জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া যায়। যেমন : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞান মেলার মতো প্লাস্টিক মেলার আয়োজন করা যেতে পারে পাশাপাশি অন্যান্য জিনিস ফেলে না দিয়ে কী করে এসব ব্যবহার করে সৃজনশীল উপকরণ তৈরি করা যায় সেগুলোর উপর প্রজেক্ট দেয়া যেতে পারে। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্লাস্টিকজাত বোতল যেখানে সেখানে যেন ফেলতে না পারে তাই কঠোর আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা করা যায়। কঠোর আইন প্রয়োগই পারে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে। অতএব প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে এবং নির্দিষ্ট স্থানে প্লাস্টিকের আবর্জনা ফেলতে হবে আমাদের সকলকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাছ লাগাই, পরিবেশ বাঁচাই
পরবর্তী নিবন্ধপরিবেশ সুরক্ষায় ধূলিদূষণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি