এবার সে-ই হলি ক্রিসেন্টের আইসিইউ সচলের চেষ্টা

প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ডাক্তার-নার্সদের।। বিআইটিআইডিতে বসেছে আইসিইউ শয্যা, আসেনি ভেন্টিলেটর

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১ জুলাই, ২০২১ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ফের উদ্বেগজনক পর্যায়ে। দিন দিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। করোনা রোগীতে আবারো ভরে উঠছে হাসপাতালগুলো। তবে চাপ বেশি আইসিইউতে। যেন ঠাঁই নেই অবস্থা। কিন্তু নগরের করোনা ডেডিকেটেড দুটি সরকারি হাসপাতালে সবমিলিয়ে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ২৬টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১০টি এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ শয্যায় সেবা পাচ্ছেন রোগীরা। ডেডিকেটেড অপর হাসপাতাল ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৫টি আইসিইউ শয্যা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখনো সেবা চালু হয়নি।
সরকারি এসব হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা প্রায়ই সময় রোগীতে ভর্তি থাকছে। আবার আর্থিক অক্ষমতায় সব রোগীর পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সেবা নেয়াও সম্ভবপর নয়। জটিল রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। অর্থাৎ আইসিইউর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার কারণে এখনই প্রস্তুতি না নিলে পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক ও সংশ্ল্লিষ্টরা। অন্যদিকে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় গত বছর চালু করা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে দশটি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত বলা হলেও প্রশিক্ষিত এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এসব আইসিইউ চালু করা যায়নি। গত বছর চট্টগ্রাম জুড়ে একটি আইসিইউর জন্য হাহাকারের মাঝেও হলি ক্রিসেন্টের এসব আইসিইউতে সেবা পায়নি রোগীরা।
তবে এখন শঙ্কাজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ হাসপাতালের আইসিইউ শয্যাও সচল করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট হিসেবে এখানে আইসিইউ সেবা চালুর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সিভিল সার্জন বলেন, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের আইসোলেশন শয্যা হয়তো প্রয়োজন নাও হতে পারে। কারণ, জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন শয্যা এখনো অর্ধেকের বেশি খালি। রেলওয়ে হাসপাতালের আইসোলেশনেও রোগী রাখা যাবে। কিন্তু আইসিইউ শয্যাটা প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই হলি ক্রিসেন্টের আইসিইউ সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য অন্তত তিন-চারটি আইসিইউ শয্যা হলেও যাতে প্রস্তুত রাখা যায়। আমরা সে ব্যবস্থা করছি।
আইসিইউ সেবা চালুর লক্ষ্যে ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুম। চিকিৎসকদের মধ্যে আইসিইউ পরিচালনায় ২ জন কনসালটেন্ট ও ২ জন অ্যানেসথেসিস্ট রয়েছেন জানিয়ে ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, মোট দশজন চিকিৎসক ও ১৪ জন নার্স আছেন। তাদের সকলকে প্রশিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে। ৭দিন করে দুই গ্রুপে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
আইসিইউর পাশাপাশি সেখানে অন্তত ২/৩টি হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা প্রস্তুত রাখা হবে। যাতে শ্বাসকষ্টের রোগীদের উচ্চ মাত্রায় অঙিজেন সেবা দেওয়া যায়।
আইসিইউ সেবা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্টের বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, আইসিইউ পরিচালনায় বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর সংযোগ অপরিহার্য। বিদ্যুৎ চলে গেলে যাতে সেবা বিঘ্নিত না হয়। তাছাড়া অঙিজেনের সিলিন্ডারগুলো রিফিলের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ দুটি বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত করেছি। সবমিলিয়ে অল্প দিনের মধ্যে এই হাসপাতালে ৬/৭টি আইসিইউ শয্যা ব্যবহার উপযোগী করার চেষ্টা চলছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। যদিও এ হাসপাতালে কর্মচারী সংকটের কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বিআইটিআইডিতে বসেছে আইসিইউ শয্যা : ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৫টি আইসিইউ শয্যা স্থাপনের কাজ শুরু হয় গত এপ্রিলে। কাজ শেষে গতকাল এখানে ৫টি আইসিইউ শয্যা বসানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিআইটিআইডির উপ-পরিচালক ডা. বখতিয়ার আলম। তবে আইসিইউ বসলেও আইসিইউর জন্য ভেন্টিলেটর এখনো পাওয়া যায়নি জানিয়ে ডা. বখতিয়ার আলম বলেন, আমরা ঢাকায় লিখেছি। কিন্তু এখনো ভেন্টিলেটর পাইনি। আর জনবলের বিষয়ে তিনি বলেন, আইসিইউ পরিচালনায় প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। আমাদের যে ডাক্তার-নার্স আছেন ওনারাই আইসিইউ চালাবেন। তাদেরই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষক করে তোলা হবে। তবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি বলে জানান তিনি। এদিকে, স্থাপন করা ৫টি আইসিইউ শয্যা দেখতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির ও সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির আজ বিআইটিআইডি হাসপাতালে পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ থেকে চট্টগ্রামের আরো দুই কেন্দ্রে চীনা টিকাদান
পরবর্তী নিবন্ধরোগী শনাক্তে নতুন রেকর্ড, মৃত্যু ১১৫