এবার কি সুফল আসবে

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প আজ সমন্বয় সভা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ

নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পগুলোর সুফল নিশ্চিতে গত বছর (২০২১) প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে পৃথক চারটি সভা হয়েছিল। প্রতিটি সভায় সংশ্লিষ্টরা একমত হন- সমন্বয় নিশ্চিত না হলে প্রকল্পের সুফল মিলবে না। তাই তারা সমন্বিতভাবে কাজ করার ঘোষণাও দেন। অথচ পরবর্তীতে কাঙ্ক্ষিত সমন্বয় হয়নি। এছাড়া সভাগুলোতে একাধিক সিদ্ধান্ত হলেও বেশিরভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে নাগরিক ভোগান্তি হলে দায় এড়াতে পরস্পরকে দোষারোপ করতে দেখা গেছে।
এ অবস্থায় আজ রোববার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অংশহগ্রহণে আরেকটি সমন্বয় সভা হওয়ার কথা রয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এবারও কি কেবল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকবে সমন্বয় সভা, নাকি সুফল আসবে? অবশ্য সমন্বয় সভার আয়োজক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সমন্বয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি মনে করেন, সমন্বয় ছাড়া কোনো উপায় নাই। মেয়র বলেন, মেগা প্রকল্পের বাইরে কিন্তু ২১টি খাল আছে। ওসব খাল যদি পরিষ্কার করা না হয় বা উদ্ধার করা না হয় তাহলে তো জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না। এসব খাল কীভাবে পরিষ্কার করা যায় সেসব নিয়েও আলোচনা হবে সমন্বয় সভায়।
জানা গেছে, গত বছরের ১ জুন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এবং চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম। এর আগে ১৫ মার্চ সিডিএ চেয়ারম্যান এবং চসিক মেয়র দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এছাড়া ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে এবং ২৬ জুন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সার্কিট হাউজে সভা হয়। এর বাইরেও চসিক-সিডিএর প্রকৌশলী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার আলাপ-আলোচনা করেন।
১৫ মার্চ এবং ১ জুন অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংশ্লিষ্টরা একমত হন, খাল-নালা পরিষ্কার করার কয়েকদিনের মধ্যে আবারো ভরাট হয়ে যায়। ভরাটের উপকরণের বেশিরভাগই গৃহস্থলী বর্জ্য, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালামাল ও পলিথিন। তাই যারা এসব পণ্য খালে ফেলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল বৈঠকে। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত ছিল, যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের খাল-নালায় মালামাল পাওয়া যাবে এবং যদি প্রমাণ হয় ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ফেলা হয়েছে তাৎক্ষণিক ওই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে। একইভাবে বাসা-বাড়ির সামনেও বর্জ্য পাওয়া গেলে যৌথভাবে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তবে গত ১০ মাসেও সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর হয়নি।
এদিকে মুখে সমন্বয়ের কথা বললেও সিডিএ ও চসিক প্রায় সময় পরস্পরকে দোষারোপ করে। বিশেষ করে নালায় পড়ে প্রাণহানির পর দোষারোপের মাত্রা অতীতকে ছাড়িয়ে যায়। আগ্রাবাদে নালায় পড়ে সাদিয়া এবং মুরাদপুরে চশমা খালে পড়ে সালেহ আহমেদের মৃত্যুর পর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন। সাদিয়ার মৃত্যুর পর গণমাধ্যমকে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আগ্রাবাদে এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের কাজ করছে সিডিএ। তাই সেখানে মেইনটেনেন্সসহ অন্যান্য দায়িত্ব তাদের। ড্রেনে ময়লা আছে, কিন্তু ড্রেনের পাশে ঘেরা ছিল না, রেলিং ছিল না, সেগুলো থাকলে তো দুর্ঘটনাটা ঘটত না। ঘেরা না দেওয়ার জন্য সিডিএকে দায়ী করেছেন মেয়র। তখন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, তারা (চসিক) নালা পরিষ্কার করবে না, আবার কিছু ঘটলেই সিডিএর দোষ দেয়। সিডিএর দোষ ধরা ছাড়া মনে হয় সিটি কর্পোরেশনের আর কোনো কাজ নাই। তারা ভালোমতো নালা পরিষ্কার করলে দুর্ঘটনা ঘটত না। সালেহ আহমেদের মৃত্যুর পরও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ছিল। তখন চসিক বলেছিল, মেগা প্রকল্পের আওতায় সিডিএ কাজ করছে। তাই তাদেরই প্রতিবন্ধকতা দিতে হবে। তখন সিডিএর বক্তব্য ছিল, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে সেখানে চসিকের ব্যারিয়ার দেয়ার কথা।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে বিভিন্ন খাল-নালায় বাঁধ দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। বিভিন্ন সময়ে চসিকের অভিযোগ ছিল, বাঁধগুলোর কারণে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধতার ভোগান্তি বাড়ে। বাঁধগুলো অপসারণে এরকাধিকবার সময় নির্ধারণ করে দিলেও নির্ধারিত সময়ে অপসারণ করা হয়নি।
এদিকে গতকাল শনিবারও বাঁধ নিয়ে অভিযোগ করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল সকালে পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডস্থ মোহনা কমিউনিটি সেন্টারের পাশে বীর্জা খালে পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, পূর্ব ষোলশহর, পশ্চিম বাকলিয়া এবং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের বৃহত্তর বাকলিয়ায় বীর্জা খালের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকা দূষিত পানি শুকনো মৌসুমেও জমাট হয়ে আছে। এমনকি বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও দূষিত পানি ঢুকে পড়ছে। রাস্তা-ঘাট ও অলিতে গলিতেও দূষিত পানি স্থিত হয়ে থাকায় জনসাধারণের চলাফেরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও বাঁধের জন্য সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন মেয়র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী আজাদীকে বলেন, কাজের সুবিধার্থে আমাদের বাঁধ দেয়া ছাড়া উপায় নাই। কাজ করতে হলে বাঁধ দিতেই হবে। তবে যতটুকু সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় সেটা আমরা চেষ্টা করছি। বড় খালগুলোতে একপাশে রাস্তা তৈরি করি, সেখানে পানি যেতে সমস্যা হয় না। ছোট খালগুলোতে বাঁধ দিতে হয়। তবে সেখানে পাইপ দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিই।
প্রসঙ্গত, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে গত চার বছর ধরে ১০ হাজার ৯২১ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে পৃথক চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সিডিএর মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুই হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লাখ ২০ টাকায় ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এছাড়া ১ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরের বহাদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একটি প্রকল্প আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে আছে তুরস্ক
পরবর্তী নিবন্ধঠিকাদারের কারণে পিছাল নির্মাণ কাজ