একটুখানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি

পদুয়া এসিএম উচ্চ বিদ্যালয়

লোহাগাড়া প্রতিনিধি | রবিবার , ৭ আগস্ট, ২০২২ at ৭:২২ পূর্বাহ্ণ

রঙ খসে পড়া জরাজীর্ণ মাটির দেয়াল আর পুরনো টিনের ছাউনিযুক্ত শ্রেণিকক্ষ। টিনের ফুটো দিয়ে গ্রীষ্মে খরতপ্ত রোদের উত্তাপ উকিঝুকি তো মারেই, বর্ষা মৌসুমে শ্রেণিকক্ষে অবলিলায় গড়িয়ে পড়ে পানি। এতে ভিজে ন্যাঁতান্যাঁতা হয় শিক্ষার্থীদের বই-খাতা, জামা-কাপড়। এমন করুণ দশা লোহাগাড়ার পদুয়া এসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের। এর মধ্য দিয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা প্রকাশ করছেন স্কুলটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ১৯৬৩ সালে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নে পদুয়া এসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে এই মাটির ঘরে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ২৭ জন শিক্ষক ও ২ হাজার ৪৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। বিদ্যালয়টি পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় দিনদিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যালয়ে পাকা ভবন থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রেণিকক্ষ সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ মাটিরঘরে ক্লাস করতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। জরাজীর্ণ মাটির দেয়াল আর টিনের ছাউনিযুক্ত শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে টিনের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। শিক্ষার্থীদের বইখাতা ভিজে যায়। আবার ফ্যান না থাকায় অসহ্য গরমে হাঁপিয়ে উঠতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া মাটির দেয়ালেও দেখা দিয়েছে একাধিক ফাটল।
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, টিনের ছাউনি আর মাটির দেয়াল দিয়ে তৈরি একটি লম্বা শ্রেণিকক্ষ। মাঝখানে বাঁশের বেড়া দিয়ে বিভক্ত করে সেখানে চলে তিনটি শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম। শ্রেণিকক্ষের ভেতর জায়গার সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায় বসেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে দেখা গেছে। এসব শ্রেণিকক্ষের ভেতর নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। ভ্যাপসা গন্ধ পুরো ক্লাসে।
বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তানিয়া সোলতানা জানায়, মাটিরঘরে ক্লাস করতে হয়। দেয়ালে অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। কখন যে ভেঙে পড়ে সেই আতংকে থাকতে হয়। ভয়ে ঠিকমত ক্লাসও করতে পারি না। এছাড়া বৃষ্টির সময় টিনের ফুটো দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়তে থাকে। বইখাতা ভিজে যায়। এছাড়া ফ্যান না থাকায় গরমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোছলেহ উদ্দিন জানান, মাটির দেয়াল আর টিনের ছাউনিযুক্ত ঘর কখন ভেঙে পড়বে তা বলা যায় না। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষের সংকট দীর্ঘদিনের। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে পড়ালেখা করছে। নতুন ভবন নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এস এম জাবেদ করিম জানান, পুরাতন জরাজীর্ণ আর ঝুঁকিপূর্ণ মাটিরঘরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছি। তিনি বলেন, আমার জানামতে চট্টগ্রাম জেলার ভেতরে এমন বিধ্বস্তপ্রায় শ্রেণিকক্ষ আর কোথাও নেই। বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ খুবই জরুরি। কর্তৃপক্ষ দ্রুত ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা না নিলে পাঠদান কার্যক্রম চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। দ্রুততম সময়ে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, পদুয়া এসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে মাটির কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারে অবগত আছি। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই-একটা ম্যাচ ভালো না হলেও আমরা খারাপ দল নই : এবাদত
পরবর্তী নিবন্ধনির্মাণ কাজ দেখতে গিয়ে মই চাপায় নিহত দুই