ইউক্রেনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা

তিন রুশ সেনা অধিনায়ক নিহত রাশিয়া গুচ্ছ বোমা ব্যবহার করছে, দাবি ন্যাটোর

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ৫ মার্চ, ২০২২ at ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কয়েক ঘণ্টার তীব্র লড়াই আর গোলাবর্ষেণের পর ইউক্রেনের জেপোরোজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দখল করে নিয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। শুক্রবার ভোরের দিকে ইউক্রেনের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের এনারহোদার শহরে রাশিয়ার গোলার আঘাতে ইউরোপের সবচেয়ে বড় এ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ট্রেইনিং বিল্ডিংয়ে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে ইউক্রেনের শত্রুপক্ষের খুব কাছাকাছি যাওয়ার পর রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অন্তত তিনজন অধিনায়ক নিহত হয়েছে বলে বলছেন পশ্চিমা দেশের কর্মকর্তারা। অপরদিকে ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলছেন, ইউক্রেনে আগ্রাসনে রাশিয়া যে গুচ্ছ বোমা ব্যবহার করছে, তার প্রমাণ আছে। আরও অন্য ধরনের অস্ত্রও ব্যবহার হওয়ার খবর পেয়েছি, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
বিডিনিউজের খবর থেকে জানা যায়, ফেসবুকে এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই কেন্দ্রের পরমাণু চুল্লিগুলো যাতে নিরাপদে কাজ করে এবং তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে সেদিকে নজর রাখছেন কর্মীরা। তবে চুল্লির ভেতরকার পরমাণু জ্বালানি শীতল রাখার পক্রিয়া যদি ব্যাহত হয়, তাহলে ব্যাপক মাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশেপাশে হাজার হাজার মানুষ থাকেন, রুশ সেনাদের গোলাবর্ষণের কারণে যারা অন্য কোথাও সরে যেতে পারছেন না, তারা এই তেজস্ক্রিয়তার ক্ষতির শিকার হবেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সতর্কবার্তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বলেছে, জেপোরোজিয়ায় পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটলে তা চেরনোবিল কিংবা জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের চেয়েও বেশি ভয়াবহ হবে।
তিন রুশ সেনা অধিনায়ক নিহত : বিবিসির খবর থেকে জানা যায়, রুশ ৩১তম কম্বাইন্ড আর্মস আর্মির উপপ্রধান এক স্নাইপারের গুলিতে নিহত হয়েছেন। একজন ডিভিশনাল কমান্ডার এবং রেজিমেন্টাল কমান্ডারও নিহত হন। রুশ বাহিনীর কোনো কোনো অধিনায়ক সৈন্য নিয়ে রণক্ষেত্রের অনেকখানি সামনে চলে গিয়েছেন। তাদের লক্ষ্য আরও বেশি ইউক্রেনিয়ান এলাকা দখল করা। তারা নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মুখভাগে চলে যাওয়ার পর অনেকেই বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
রাশিয়া গুচ্ছ বোমা ব্যবহার করছে : ন্যাটো মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলছেন, ইউক্রেনে আগ্রাসনে রাশিয়া যে গুচ্ছ বোমা ব্যবহার করছে, তার প্রমাণ আছে। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা ক্লাস্টার (গুচ্ছ) বোমা ব্যবহার হতে দেখেছি। আরও অন্য ধরনের অস্ত্রও ব্যবহার হওয়ার খবর পেয়েছি, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
ইউক্রেনে বিমান ‘উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা’ প্রতিষ্ঠা করা কিংবা সে দেশে সেনা পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর নেই বলে জানান স্টলটেনবার্গ। তবে ইউক্রেনকে অন্যভাবে সাহায্য করবেন বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে ইউক্রেনে এই আগ্রাসনের অবসান ঘটানোর জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকেও আহ্বান জানিয়েছেন স্টলটেনবার্গ।
বিবিসি-ভয়েস অব আমেরিকা ওয়েবসাইট বন্ধ : ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, ডয়চে ভেলেসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি সংবাদ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে রাশিয়া। রাশিয়া বারবার অভিযোগ করে বলে আসছে, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো প্রায়ই বিশ্বের আংশিক এবং রাশিয়া-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গিই তুলে ধরে। অথচ পশ্চিমারা ইরাকের মতো দেশে কিংবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিদেশে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের জন্য তাদের নিজ নিজ নেতাদেরই জবাবদিহি করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
গতকাল রাশিয়ার যোগাযোগ তদারককারী প্রতিষ্ঠান ‘রোসকমাদজর’ বলেছে, তারা বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি, জার্মানির ডয়চে ভেলে এবং অন্যান্য গণমাধ্যমের ওয়েসবাইট বন্ধ করে দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিষেধাজ্ঞা নিয়ে হুঁশিয়ারি পুতিনের
পরবর্তী নিবন্ধঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪০ কিমি যানজট