ইউএনও’দের উপজেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা করার বিধান অবৈধ

হাইকোর্টের রায় এখন থেকে আর উপজেলা প্রশাসন ব্যবহার করা যাবে না উপজেলা পরিষদের কাছে ইউএনও’র জবাবদিহিতা থাকবে

| বৃহস্পতিবার , ৩০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) উপজেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিধান অবৈধ এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন ব্যবহার অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে আর উপজেলা প্রশাসন ব্যবহার করা যাবে না। আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ ব্যবহার করতে হবে। উপজেলা পরিষদের কাছে ইউএনও’র জবাবদিহিতা থাকবে। খবর বাসসের।

দুটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেল সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল এ রায় দেন। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট এ সংক্রান্ত রুল জারি করেছিলেন। রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি, ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম, মো. মিনহাদুজ্জামান লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম আদালতের আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আর্থিক শৃঙ্খলা আনয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সাচিবিক দায়িত্ব পালনের বিধানসম্ববলিত আইনের ৩৩ ধারা অবৈধ ঘোষণা করেছে আদালত। ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। আইনের ৩৩ ধারার () উপধারায় বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন। ৩৩এর () উপধারায় বলা হয়েছে, পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করিবেন।’ তিনি বলেন, ‘পরিষদ কোনো সিদ্ধান্ত দিলে তা ইউএনও বাস্তবায়ন না করলে, পরিষদের করণীয় কিছু থাকে না। কারণ উপজেলা পরিষদের কাছে ইউএনও’র জবাবদিহির বাধ্যবাধকতা আইনে রাখা হয়নি। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার স্বাধীনতাকে এই একটি ধারার মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই ৩৩ ধারা সংবিধানেরও ৭ ও ৫৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। ৫৯ ()-এ স্থানীয় শাসন সম্পর্কে বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।’ তিনি বলেন, এই রায়ের ফলে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হবে। ইউএনও’র একছত্র ক্ষমতা থাকবে না। উপজেলা পরিষদের কাছে ইউএনও’র জবাবদিহিতা থাকবে।

ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম আরও বলেন, ‘মাঠ প্রশাসন কোনো চিঠিপত্র লিখলে বা অনুষ্ঠান করলে দাওয়াতপত্র বা ব্যানারে উপজেলা পরিষদ না লিখে, লিখছে উপজেলা প্রশাসন। এই ‘উপজেলা প্রশাসন’ কোথাও উল্লেখ নেই। এর মাধ্যমে ইউএনও’রা স্থানীয় সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকেন। এ ছাড়া সরকারি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে যতগুলো কমিটি গঠন করা হয়, তার সবগুলোতে ইউএনও’কে চেয়ারম্যান করা হয় এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের করা হয় উপদেষ্টা। আবার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ থাকে, ইউএনও ইচ্ছে করলেই আরও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রায় নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। এমনি অনেক ক্ষেত্রে আয়ব্যয়ের হিসাবও তাদের দেয়া হয় না, যা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও স্থানীয় সরকার পদ্ধতির চেতনার পরিপন্থি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধফতেয়াবাদে আটকে থাকা ভূমি উন্মুক্ত হচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধঢাকায় আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর আজ