ফতেয়াবাদে আটকে থাকা ভূমি উন্মুক্ত হচ্ছে

ঝুলে থাকা আবাসিক প্রকল্প সংশোধনের উদ্যোগ ।। ৫শ একরে হবে সিডিএ আবাসিক

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ৩০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

দেড় দশক পর ফতেয়াবাদবাসীর দুর্গতির অবসান হতে যাচ্ছে। ‘ডেভেলপমেন্ট অব ফতেয়াবাদ নিউ টাউন’ নামে সিডিএর আবাসন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণের আওতায় আটকে থাকা ভূমি উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত ৭ হাজার একরেরও বেশি ভূমি থেকে ৫শ’ একর রেখে বাকি ভূমি উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা থাকা প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সিডিএ। ভবিষ্যতের উপশহর ফতেয়াবাদকে কোনও ভাবেই বস্তি করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ। পুরো এলাকায় কোনও স্থাপনা নির্মাণ কিংবা উন্নয়নে অবশ্যই সিডিএর অনুমোদন নিতে হবে।

হাটহাজারী উপজেলার এই এলাকার প্রায় ৭ হাজার একর ভূমিতে এই দীর্ঘ সময় ধরে বাড়িঘর নির্মাণের অনুমোদন দিচ্ছিল না সিডিএ। যেহেতু স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন ছিল না, তাই জমির ক্রেতাও ছিল না। ক্রেতা পাওয়া গেলেও উপযুক্ত দাম পাওয়া যেত না। এ কারণে আটকে গেছে অনেকের বিদেশ যাত্রা, চিকিৎসা, মেয়ের বিয়ে কিংবা নতুন ব্যবসা শুরুর কাজ।

নগরীর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ফতেয়াবাদ এলাকাটি শহর লাগোয়া চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই। ফতেয়াবাদ এলাকাকে উপশহর হিসেবে গড়ে তুলতে ২০০৭ সালে নেয়া ‘ডেভেলপমেন্ট অব ফতেয়াবাদ নিউ টাউন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। আবাসন প্রকল্পটির জন্য ওই সময় ৪ হাজার ৭শ’ একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়। প্রকল্পটির প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কার্যক্রম চললেও শেষতক সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এরমধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ প্রণয়ন করে। শহরের কোন এলাকায় কি হবে, কোথায় আবাসন এলাকা হবে, কোথায় শিল্পায়ন হবে, কোথায় জলাধার হবে, কোথায় ভবিষ্যতে রাস্তা হবে ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে ড্যাপে। ড্যাপে শিল্পাঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত জায়গায় কোনও আবাসিক ভবনের অনুমোদন দেয়া হয় না। আবার আবাসিক এলাকায় শিল্পায়নের অনুমোদন নেই। পরিকল্পিত নগরায়নের সুবিধার জন্য প্রণীত ড্যাপে ফতেয়াবাদের আবাসন প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত এলাকার সাথে আরো ২ হাজার ৩শ’ একর বাড়িয়ে মোট ৭ হাজার একর ভূমি চিহ্নিত করা হয়। ২০১৩ সালে শুরু করে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু সংশোধিত প্রকল্পটি গত ১০ বছরে আলোর মুখ দেখেনি।

প্রকল্পটি আলোর মুখ না দেখলেও এলাকার প্রায় দুই লাখ বাসিন্দার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। তারা তাদের বাপ দাদার ভিটামাটিতে ঘর বানাতে পারছিল না। কোনও প্ল্যান দেয়া হচ্ছিল না পুরো এলাকায়। বহু মানুষ প্রয়োজনেও ঘর বড় করতে পারেনি। অনেকেই মেয়ের বিয়ে দেয়া, চিকিৎসা খরচ বা সন্তানের লেখাপড়া বা বিদেশ পাঠানোর টাকার জন্যও জমি বিক্রি করতে পারেনি। সিডিএর প্রকল্প নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়া এলাকাবাসী নিজেরা একটি সংগঠন করে, ওই সংগঠনের ব্যানারে নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি সিডিএ কার্যালয়ে যাওয়াআসা করতে করতে পায়ের জুতা ক্ষয় করেছে। আন্দোলন করেছে। কিন্তু কোনও কিছুতেই তাদের দুর্ভোগের অবসান হচ্ছিল না।

সিডিএর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কোনও ভাবেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে স্থানীয়রা জানান, এলাকার ভূমির মৌজা ভ্যালু অনেক। এর তিনগুণ টাকা পরিশোধ করার পর ভূমি উন্নয়ন করে তাতে প্লট তৈরি করে প্রতি কাঠা জমি ৪০/৫০ লাখ টাকায় বরাদ্দ দিতে হবে। শহরের এত দূরে গিয়ে এত চড়া দামে কেউ প্লট কিনবে না। প্রকল্পটি ব্যর্থ হবে।

হাটহাজারী ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজায় ভিটা হিসেবে চিহ্নিত প্রতি শতকের মৌজা ভ্যালু ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭০ টাকা, নাল জমির মৌজা ভ্যালু ৩ লাখ ৯৭ হাজার ১০১ টাকা, খিলা, বাগান, পাউন্ডি প্রতি শতক ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৭৪ টাকা, পুকুর, ডোবা এবং খাই ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৩২ টাকা, পাহাড় টিলা ৩৫ হাজার টাকা। এসব জায়গা সিডিএ হুকুম দখল করতে হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মূল্য পরিশোধ করতে হবে তিনগুণ। ভিটা হিসেবে চিহ্নিত জায়গাগুলো হুকুম দখল করতে হলে কাঠা প্রতি মৌজা ভ্যালু ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৪৫০ টাকার তিনগুণ ৪২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৫০ টাকা শুধু ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করতে হবে। পরবর্তীতে এই ভূমি উন্নয়ন এবং রাস্তাঘাট নির্মাণ করে সিডিএ’র পক্ষে কাঠা প্রতি ৬০ লাখ টাকার কমে বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে না। নাল জমি কাঠা প্রতি মূল্য ৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৩৫ টাকার বিপরীতে হুকুম দখল করলে মূল্য পরিশোধ করতে হবে ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫০৫ টাকা। এর সাথে উন্নয়ন খরচ যুক্ত করলে ৩০ লাখ টাকার কমে বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে না।

এভাবে বহু হিসেব নিকেশের পর অবশেষে সিডিএ প্রকল্পটি আবারো সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে অপেক্ষাকৃত কম মৌজা ভ্যালু রয়েছে এমন জায়গার ৫শ’ একর জায়গা রেখে বাকি ৬ হাজার ৫শ’ একর জায়গা উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। এসব জায়গার জন্য প্ল্যানের কোনও সমস্যা হবে না। তবে সিডিএ পুরো এলাকাটিকে একটি পরিকল্পিত এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। সিডিএ রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং বিদ্যমান সড়কগুলো প্রশস্থ করবে। বাড়িঘরসহ যে কোনও স্থাপনার অনুমোদন দেয়ার আগে সেগুলো উপশহরের সাথে যায় কিনা সেটি মাথায় রাখা হবে।

সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা ফতেয়াবাদে ৫শ’ একরের একটি আবাসিক এলাকা করবো। বাকি এলাকা উন্মুক্ত করে দেবো। তবে কোনও ভাবেই এলাকাটিকে বস্তি করতে দেয়া হবে না। আমরা বাড়িঘরের প্ল্যান দেবো, তবে কোথায় কোথায় বাড়িঘর বা অন্যান্য স্থাপনা হতে পারবে তাও আমরা ঠিক করে দেবো। তিনি জানান, ফতেয়াবাদে পরিকল্পিত নগরায়ন হবে, উপশহর হবে। রাস্তাগুলো পরিকল্পিতভাবে আমরা সম্প্রসারণ করবো। কোথাও দরকার হলে নতুন সংযোগ সড়কও নির্মাণ করবো। সিডিএ’র অনুমতি নিয়েই যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। সিডিএ সব ধরনের স্থাপনার ব্যাপারেই অনুমোদন দেবে। অচিরেই ফতেয়াবাদে বাড়িঘরের প্ল্যান দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে বলেও কাজী হাসান বিন শামস জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিহত বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়ে ১৮, তিনজন মহেশখালী-রামুর
পরবর্তী নিবন্ধইউএনও’দের উপজেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা করার বিধান অবৈধ