নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়ে ১৮, তিনজন মহেশখালী-রামুর

সৌদি আরবে বাস দুর্ঘটনা ।। ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে মারা যায় শেফায়েত

মহেশখালী ও রামু প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৩০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

ওমরাহ করতে যাওয়ার পথে সৌদি আরবে আকাবা শারে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়ে ১৮ জন হয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি কক্সবাজারে। এদের মধ্যে দুইজন মহেশখালী ও একজন রামু উপজেলার বাসিন্দা।

তারা হলেন মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালীর পূর্ব ফকিরাঘোনা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আসিফ (২১) ও তার খালোতো ভাই শেফায়েতুল ইসলাম (২২)। নিহত অপর ব্যক্তি রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ঘোনারপাড়া বাহারকাছা এলাকার কাদের হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ হোছাইন।

নিহত আসিফের ছোট ভাই হাফেজ মুজাহিদুল ইসলাম মারুফ বলেন, আমার ভাই সেখানে একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করতো। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে দুই বছর আগে মামাদের সহযোগিতায় তিনি সৌদি আরবে যান। ঈদের পর দেশে আসার কথা ছিল। ভাইয়ের সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মারুফ।

উঠানে চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ পরপর বুক চাপড়ে কান্না করছিলেন আসিফের বৃদ্ধ বাবা আহম্মদ উল্লাহ। তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হওয়ার পর আসিফই পরিবারের হাল ধরেছিল। এখন কি হবে, ছেলেকে দেশে আনতে পারব কিনা কিছু বলতে পারছি না। ছেলের মরদেহ দেশে আনার জন্য আমি সরকারের সহযোগিতা চাই।

একই এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে ও নিহত আসিফের খালাতো ভাই শেফায়েতুল ইসলাম। সোমবার বিকেলে ওমরা পালন করতে যাওয়ার পথে সৌদি আরবের আকাবা শারে এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনিও। বাসটি যখন মক্কার দিকে রওনা দেয় তখন বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন শেফায়েত। এসময় কথা বলতে বলতেই বিকট একটা শব্দ শোনা যায়। এরপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

শেফায়েতের বড় ভাই জাহেদুল ইসলাম সাগর বলেন, দুর্ঘটনার দুই চার মিনিট আগে ফোন দেয় ছোট ভাই। তখন সে গ্যাসের চুলা সতর্কভাবে ব্যবহার করতে এবং বাবা ও বাড়ির শিশুদের ভালভাবে দেখতে পরামর্শ দেয়। এসব কথা বলতে বলতেই হঠাৎ বিকট একটা শব্দের পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর আর যোগাযোগ করা যায়নি।

মহেশখালীর ইউএনও মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, নিহতদের মধ্যে আসিফের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। সেই কারণে তার পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ঘোনারপাড়া বাহারকাছা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নিহত হোছাইনের পরিবারেও চলছে শোকের মাতম। ৭ বছর পূর্বে জীবিকার তাগিদে হোছাইন সৌদিতে যান। সেই থেকে পরিবারটি ভালোভাবে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আকস্মিক উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদের পর দেশে ফেরার কথা ছিল আসিফের
পরবর্তী নিবন্ধফতেয়াবাদে আটকে থাকা ভূমি উন্মুক্ত হচ্ছে