আহা ঈদ!

সুলতানা নুরজাহান রোজী | শুক্রবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৩ at ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

আমারা যখন ছোট ছিলাম তখন পুরো রোজা কাটতো আলাদা একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। রোজার আগের দিন থেকে কত জল্পনা কল্পনা। কে কয়টা রোজা রাখবে আর কে কার আগে কোরআন খতম দেবে। বলতে গেলে কঠিন প্রতিযোগিতা চলতো পরিবারের সদস্যদের সাথে।

যৌথ পরিবারের মজাটাই অন্যরকম। ঈদের কেনাকাটা করার জন্য নিউমার্কেট চলে যেতাম। সন্ধ্যার পরে গেলে তো খুব মজা। ঘুরতে ঘুরতে হাঁপিয়ে উঠলে ডায়মন্ড নামে একটা দোকান ছিল কাটলেট আর বোম্বে টোস্ট আর চা খাওয়ার জন্য। আহা কী আনন্দ! কী মজা। আর লাচ্ছি ফালুদা দোকান ছিলো একটা।

ওখানে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ফালুদা মন জুড়িয়ে যেতো। আর এখন ছেলে মেয়েদের মধ্যে ঐ আনন্দটুকু দেখি না। এখন আধুনিক মনোভাব আধুনিক পরিবেশ আধুনিক যুগ। সময়ের পরিবর্তনে মন মানসিকতার পরিবর্তন। ঈদ বাজারের আনন্দের মাঝেও আধুনিকতা এসেছে।

আমরা ২/৩টা জামা কিনে কত খুশি হতাম কাউকে দেখতে দিতাম না। ভাবতাম কিভাবে সাজবো কোথায় কোথায় যাবো। কেউ না দেখে মতো আস্তে আস্তে বের করতাম। কতবার যে নতুন জামাগুলো খুলে খুলে দেখতাম। এখনকার বাচ্ছারা মা বাবাকে নিয়ে ঈদের বাজার করতে যায় না। বন্ধু বান্ধব নিয়ে আডডা দেওয়া ক্যাপে তে বসে বসে প্রতিদিন যেন তাদের ঈদ। নির্দিষ্ট কোনো উৎসব উপলক্ষ্য নেই তাদের কাছে। কোনো হৈ হুল্লোড় নেই ঘরে ঘরে কোনো চেঁচামেচি নেই নতুন জামা কাপড় নিয়ে ছোটাছুটি নেই। সব কিছুতে যেন মেকি ভাব আনন্দটাও যেন ভাগাভাগি হয়ে গেছে আধুনিকতার নামে।

চাঁদ রাতের দিন। চাঁদ দেখা না গেলে ছাদে উঠে দেখতাম কেন চাঁদ দেখা যাচ্ছে না? রেডিও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো খুলে রাখা হতো। ‘রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ এই গান টা ঘরে ঘরে শোনা যেত মসজিদে মাইকে বলতো ঈদের নামাজ শুরু হবে কয়টায় একটা ভো ভো করে আওয়াজ হতো চাঁদ উঠলে।

তারপর ধুম পড়ে যেতো চারিদিকে। ঘরে ঘরে সেমাই পোলাও জর্দা, পায়েস কদুর সেমাই আরো কত কী!

তখন এই নাস্তার মধ্যেও বাঙালিয়ানা ছিলো। এখন তো নানা রকম নাস্তার মাঝে গুরা পিঠা, কদুর সেমাই, ফকরুদ্দিনের বাংলা সেমাই হারিয়ে গেছে। সকালে নতুন জামা পরে ঈদি পেতাম পাঁচ টাকা দশ টাকা একশ টাকা । কতো আত্মীয়স্বজন আসতো বেড়াতে পুরো বাড়ি জুড়ি আনন্দ হৈচৈ যেন চাঁদের হাট সন্ধ্যায় বসে বসে টাকাগুলো গুনে রেখে দিতাম মাথার কাছে কেউ নিয়ে নিবে তাই পরের দিন সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখে আসবো। বাংলা সিনেমা। সবাই একত্রিত হয়ে।

আর এখনকার ছেলেমেয়েরা নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে কোথাও বেড়াতে যেতে বললে তাদের কাছে ভালো লাগে না এতো আত্বীয় স্বজনদের কাছে যাওয়া পছন্দ করে না। তারা নিজেরাই নিজেদের কে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

কী অদ্ভুত সময়ের বিবর্তন।

এখন কাউকে প্রয়োজন হয় না শুধু হাতে একটা আধুনিক ভার্সনের মোবাইল থাকলে হবে আর কিছু দরকার নেই। মারাত্মক আসক্ত নেশা আর দারুণ ভাবে আত্বকেন্দ্রিক পরিবার ও পরিবেশ। তখন সাদা কালো টেলিভিশন ছিলো বেশির ভাগ মুষ্টিমেয় কয়েকজন থেকে রঙিন টেলিভিশন ছিলো। শুধু বিটিভি চ্যানেল এ ঈদের দিন সহ সাত দিন ভালো ভালো প্রোগ্রাম চালু করা হতো।

ফজলে লোহানীর যদি কিছু মনে না করেন, ছায়াছন্দ, আনন্দ মেলা অনুষ্ঠান ছোট দের বিভিন্ন মজার মজার অনুষ্ঠান ছিল।

এখন তো বিদেশী চ্যানেলগুলোই হলো আমাদের ঘরে ঘরে বিনোদন। তখন ঈদের ছুটি ছিল পনের দিন কারো কারো একমাস ছিল স্কুল বন্ধ। নানার বাড়ি খালার বাড়িতে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এখনকার বাচ্ছারা ঠিক ভাবে নিজের পরিবারের মানুষগুলোকেই জানে না চিনে না।

একসাথে খেতে বসা গল্প গুজব করা। খাওয়ার টেবিলে নেই কাড়াকাড়ি করে খাওয়া, নেই কোন ছোটাছুটি। আধুনিকতার নামে সব ইচ্ছা ও ভালোবাসাকে জ্যান্ত মাটি চাপা দেওয়ার মতো বুকে চাপা দেওয়া। ঈদের ছুটি কাটানোর পর আবার সবাই শহরে চলে আসা হতো আবার আগামী ঈদের জন্য অপেক্ষা।

লেখক : কবি ও নারী উদ্যোক্তা

পূর্ববর্তী নিবন্ধছোটবেলার ঈদ
পরবর্তী নিবন্ধমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর