আসুন, শিশুবান্ধব বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকারাবদ্ধ হই

ড. মনজুর-উল-আমিন চৌধুরী | রবিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ

২০নভেম্বর ছিল সর্বজনীন শিশু দিবস। জাতিসংঘের ১৯৫৯সালের ২০নভেম্বর ‘শিশু অধিকার ঘোষণা ও ১৯৮৯সালের ২০নভেম্বর ‘শিশু কনভেনশন’ প্রণয়নের দিন। অতএব দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যবহ। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৫৪ সালে সর্বপ্রথম শিশুদের জন্য এ দিনটি পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পৃথিবীর দেশে দেশে ‘২০নভেম্বর সর্বজনীন শিশুদিবস’ পালিত হয়। সর্বজনীন শিশুদিবস এবারের প্রতিপাদ্য- To help Children recover learning loss due to  covid-19.
১৯৯০সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ-শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী প্রথম ২২টি দেশের মধ্যে অন্যতম। এ পর্যন্ত পাঁচবার শিশু অধিকার বাস্তবায়নে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়। আইএলও কনভেনশন ১৩৮সহ কয়েকটি ধারা স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা চলছে।
ইতোমধ্যে শিশুদের সুরক্ষা ও কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ: (১) শিশু আইন-২০১৩ (প্রথম ১৯৭৪সালে) (২) শিশুনীতি-২০১১ (৩) শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০ (৪) গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি -২০১৫ (৫) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (৬) শ্রম আইন-২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) (৭) বাল্যবিবাহ আইন-২০১৭ (৮) পাচার প্রতিরোধসহ নানা বিষয়ে শিশুদের সুরক্ষামূলক আইন ও নীতিমালা রয়েছে। তাছাড়া স্বতন্ত্র শিশু আদালত ও শিশু বাজেট কার্যক্রম বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও সচল রয়েছে।
কোভিড-১৯ এর কারণে ১৮৮টি দেশের স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে ১৫০ কোটি শিশু-কিশোরের উপর। ২০২০সালের ১৭মার্চ থেকে ১২সেপ্টেম্বর ২০২১ স্কুল খুলে দেওয়ার আগ পর্যন্ত পুরোটা সময় স্কুল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে ৩কোটি ৭০লক্ষ শিশুর লেখাপড়া ব্যাহত হয়েছে। এই সময়ে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়াসহ সমগ্র এশিয়ার প্রায় ৮০ কোটি শিশুর লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ভিশনের জরিপ বলছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ৯১শতাংশ শিশু ও তরুণ মানসিক চাপ ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। আমাদের শিশুরাও এ পরিস্থিতির বাইরে নয়।Impact of Covid-19 pandemic on the mental health of children in Bangladesh : A cross sectional study (Children and youth services, October 2020)  সূত্রে জানা যায়, শিশুরা বিষন্নতা, উদ্বেগ এবং ঘুমের সমস্যায় ভুগছে। মাঝারি এবং গুরুতর সমস্যার হার যথাক্রমে ১৯.৩শতাংশ ও ৭.২শতাংশ। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার’র বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
পৃথিবীর যে দুটি দেশ করোনাকালীন দীর্ঘ ১৮মাস সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাকে সহজ ও নিরাপদ সমাধান ভেবেছে বাংলাদেশ তার একটি। এভাবে ক্রমাগত দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ রাখার পরিণতিতে শিক্ষার ক্ষতি, বিশেষজ্ঞদের মতে মারাত্মক ক্ষতি, যা সহজে পূরণ হবার নয়। চরম ঝুঁকিতে ফেলে দেয়া হয়েছে একটি প্রজন্মকে। এতে শিশুর পড়ালেখার ক্ষতি, মানসিক দুর্দশা, স্কুলের খাবার ও টিকা না পাওয়া, কাঠামোগত শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ জ্যামিতিক হারে বেড়ে গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে দারিদ্র ১শতাংশ বৃদ্ধিতে শিশুশ্রম .৭০শতাংশ বাড়বে। নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে ৪৩শতাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নীচে বাস করে, দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৬৪শতাংশ শিশু পরিবারে কঠিন খাদ্য সংকটের কথা বলছে।
কোভিডের প্রভাবে দারিদ্র, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, মহিলাদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝোঁক বেশী, রিভার্স মাইগ্রেশন (শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া) যেমন বেড়েছে তেমনি বৈষম্যও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্যে জানা যায় গত ছয়মাসে ৬হাজার লোক কোটিপতি হয়েছে।
Demographic dividend – জনমিতিক সুফল ১৯৭৮-২০৩৩ সাল অর্থাৎ ৫৫ বছর আমরা ভোগ করছি। বাস্তবতা হচ্ছে বয়স্ক মানুষের দেশে পরিণত হতে সময় লাগবে মাত্র ১৮বছর অর্থাৎ – ২০৫০-২০৫১ সালের দিকে । জনমিতিক সুবিধার পরিসর কালেই শিশুদের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, শিশুদের জন্য বিনিয়োগ হচ্ছে বয়স্কদের সুরক্ষা, কারণ পরিণত বয়সে শিশুরাই তো দেখাশোনা করবে বয়স্কদের। শিশুদের শিক্ষা ও প্রারম্ভিক বিকাশে যত্নবান হওয়া জরুরী। শিক্ষাকে আনন্দদায়ক প্রযুক্তিমুখী করা দরকার, সে সাথে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা ও দক্ষতা বাড়ানোর উপর জোর দিতে হবে।
গবেষণায় দেখা যায়, ১৫বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে ১৮শতাংশ মেয়ের ১৫বছরের মধ্যে বিয়ে হয়, আর ৫২ শতাংশ মেয়ের ১৮বছরের মধ্যে বিয়ে হয়। উপেক্ষিত বয়ঃসন্ধিকালে (১০-১৪বছর)। শিশশ্রমে যুক্ত ৩৪.৫০লক্ষ শিশু, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত ১৩লক্ষ শিশু। ঙঁঃ ড়ভ ঝপযড়ড়ষ ৩০লক্ষ শিশু। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ২০১৯সালের মার্চের ‘শিশু জরিপের তথ্য’ অনুযায়ী চট্টগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা বঞ্চিত রয়েছে ৬০হাজার শিশু এ সংখ্যা বর্তমানে বাড়বে সেটা সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায়। রেশম, ট্যানারি, গ্লাস, শীপ রিসাইক্লিং, সিরামিক , চামড়াজাত দ্রব্য ও পাদুকা এই ছয়টি খাতকে শিশুশ্রম মুক্ত ঘোষণা করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। ইতোপূর্বে রপ্তানীমুখী তৈরী পোষাক শিল্প ও চিংড়ি খাতকে শিশুশ্রম মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রানুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে রাষ্ট্রসমূহ ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম মুক্ত করার অঙ্গীকার থাকলেও ২০২৫সালের মধ্যে দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম মুক্ত করার লক্ষ্যে ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ে ১লাখ শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে আনার লক্ষ্যে ১১২টি এনজিও’র সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি সই করেছে শ্রম মন্ত্রণালয় এবং ২০৩০সালের আগেই শিশুশ্রম মুক্ত বাংলাদেশ গঠনের কর্মপরিকল্পনা রয়েছে সরকারের যদিও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতে বাস্তবতা ভিন্ন এবং সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অথচ ঝউএ এড়ধষং -৮ হচ্ছে ‘ উবপবহঃ ডড়ৎশ ধহফ ঊপড়হড়সরপ এৎড়ঃিয ’ শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বড় প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি সে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব?
শিশুশ্রম তো শিশুর জন্মের মতোই একটি চলমান প্রক্রিয়া-এটা সমাজ কাঠামোগত সমস্যা। বাংলাদেশের বিদ্যমান শোষণ ভিত্তিক সমাজ কাঠামোর আমূল পরিবর্তন না করে শিশু, নারী, প্রান্তিক জনগণ এক অর্থে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা একটি অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিদ্যমান সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে মাঝে মধ্যে আমরা সংস্কার-ঝালাই (ঞরহশবৎরহম) করে সর্বস্তরের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হই যা প্রকৃত অর্থে মানুষের মুক্তির জন্য যথাযথ নয়।
১২সেপ্টেম্বর ২০২১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে শিশুদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেছে, স্কুলে যাওয়া কিংবা পাঠক্রমের প্রতি আগ্রহ নেই, পড়ালেখার কথা বললেই মা-বাবা এমন কি শিক্ষকদের সাথে শোভন আচরণ করছে না – অসহনশীল, খিটমিটে এবং রাগান্বিত। স্কুলের নিয়ম কানুন সব ভুলে গেছে, ক্লাসে ঘুমাচ্ছে, ইচ্ছেমতো ক্লাস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, স্কুল ড্রেস ব্যবহারের নিয়ম মানছে না, এমন কি শিক্ষকের সাথে কথা বলার সময় যে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হয় সে আদবটা পর্যন্ত ভুলতে বসেছে।
করোনাকালে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেয়ার জন্য সামর্থ্যবানরা শিশুদের বেশি সক্ষমতা বা স্পেসিফিকেশনের দামি স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার কিনে দিয়েছে। এ সুযোগে সন্তান অনলাইন গেমসহ যৌন উত্তেজনা উদ্দীপক যাবতীয় বিষয়ে আসক্ত হয়ে গেছে এখন পড়ালেখার কথা বললেই তেড়ে উঠছে, সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছে অনেক শিশু। অভিভাবকদের উচিত ছোটদের জন্য নিরাপদ অনলাইনের ব্যবস্থা করা এবং তারা কি দেখছে সেটা নজরদারি করা। সে ক্ষেত্রে জবংঃৎরপঃবফ ইড়ধৎফ বলে একটা অপশন থাকে ণড়ঁঞঁনব সহ প্রতিটি চষধঃভড়ৎস এ। এটা চালু থাকলে ১২বছরের কম বয়সীদের জন্য উপযোগী নয় এমন ঈড়হঃবহঃ দেখায় না। শিক্ষক, অভিভাবকদের অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে শিশুদের পাঠোদ্যমী করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা দর্শনই তো বলে ‘ খবধৎহ, টহষবধৎহ ধহফ জব-ষবধৎহ্থ ‘শেখো, ভুলে যাও, আবার শেখো’। মনোবিদরা বলছেন সহিংসতাপূর্ণ গেম খেলে এদের কেউ কেউ সহিংসতা বা জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়ার আংশকাও রয়েছে। মনোবিদ ক্রেইগ এ অ্যান্ডারসন’র অভিমত, ‘ এধরণের গেম বিরোধ পরিস্থিতির সহিংস সমাধান শেখায়। বাস্তব জীবনে এমন পরিস্থিতি তৈরী হলে সহিংস হয়ে ওঠার আশংকা তৈরী হয়’। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত গেম আসক্তির কারণে শিশুর মানসিক জটিলতা ও শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এ সর্বনাশা আসক্তি থেকে বাচ্চাদের ফেরাতে হবে – গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায় পাবজি গেইম খেলার প্রলোভন দেখিয়ে ৬শিশুকে বলাৎকার করে বর্তমানে শ্রীঘরে আছে যশোরের অভয় নগরের আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিজাম আকুঞ্জী ( দৈনিক সমকাল, ২৭ অক্টোবর ২০২১)।
পিপিআরসি-বিআইজিডি’র গবেষণায় জানা যায় গ্রামে ৪৪শতাংশ পরিবারে এবং শহরের বস্তিতে ৩৬শতাংশ পরিবারে অনলাইন শিক্ষা গ্রহণের জন্য যে – উবারপব উপকরণ দরকার তার ব্যবস্থা নেই যা ডিজিটাল ডিভাইড (উরমরঃধষ উরারফব) নামে পরিচিত। এই বৈষম্য-অসমতা আমাদের শোষণমূলক সমাজ কাঠামোর কারণেই সৃষ্ট।
কোভিড দ্বিতীয় টেউ পরবর্তী বাস্তবতায় শিশু নির্যাতন, শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, অপুষ্টি, শিশু অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ে যেমন নজর দেয়া জরুরী, তেমনি জরুরী সাংবিধানিক অঙ্গীকার অনুযায়ী সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে শিশুর সৃজনশীলতা, বিকাশ এবং আনন্দময় পরিবেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমুখী শিক্ষায় গড়ে তোলা।
 `Reimagining the future of Children’s ’ – শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে ভাবুন – শ্লোগানটি দিন দিন বুলন্দ হচ্ছে। আমি আপনি যেভাবে বেড়ে উঠেছি সে পৃথিবী বদলে গেছে এবং পরিবর্তনের গতি অত্যন্ত তীব্র। কাজেই পরিবর্তিত বাস্তবতার নিরিখে শিশুদের সেবা ও চাহিদা পূরণের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা সময়ের দাবী।
সুকান্তের ভাষায় – ‘প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল/ এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’। এ অঙ্গীকার একজন সুকান্ত ভট্টাচার্যের নয়, এ অঙ্গীকার সমগ্র মানব জাতির। আসুন ‘সর্বজনীন শিশুদিবস ২০২১’ এ শিশুবান্ধব বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হই।
লেখক : সমাজবিজ্ঞানী ও সিনেট সদস্য,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেয়ারম্যান ঘাসফুল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে
পরবর্তী নিবন্ধমা হলেন এভলিন