আসুন মানবিক হই

রশীদ এনাম | শনিবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

“আমি এমন কিছু করতে পারি যা আপনি পারেন না, আবার আপনিও এমন অনেক কিছু করতে পারেন যা আমি কখনো করতে পারব না। তবে এক সাথে মিলে আমরা চাইলে অসাধারণ কিছু করে ফেলতে পারি”- কথাটা বলেছিলেন মাদার তেরেসা। আমাদের চারপাশে নিষ্পেষিত পরিবারের ফুলের মতো শিশুরা সবচেয়ে বড় অসহায়। বিশেষ করে এতিম মাসুম শিশুরা। কিছু শিশু ভিকটিম হয় পিতামাতার পারিবারিক কলহ এবং বিচ্ছেদের কারণে। বাবা মারা গেছেন মা আরেক স্বামীর সাথে ঘর করেছেন কিংবা মা মারা গেছেন বাবা আরেকটি বিয়ে করে ঘর করছেন। এসব পরিবারের শিশুরা সবচেয়ে বেশি অসহায়, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুরা ঈশ্বরের দূত। আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কী ? আমি প্রথমে বলব, শিশু। শিশু এবং বাগানের ফুলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ফুল হাসলে যেমন পুরো বাগান হেসে ওঠে ঠিক তেমনি শিশুরা হাসলে পুরো পৃথিবী হেসে উঠে।

আমি আজ এক অসহায় শিশুর গল্প শোনাব- নূর মোহাম্মদ জিলানী (১০), চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় তার বাড়ি, দাদীর সাথে থাকেন কক্সবাজারের কলতলীতে। তিন মাস বয়সে জিলানীর মা পরপুরুষের সাথে পালিয়ে যায়। সে সময় তার বাবাও মারা যায়। শিশু জিলানী লালিত হয় তার বিধবা দাদীর কাছে। দাদী মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করে শিশুটিকে লালন-পালন করেন। জিলানীকে এক সময় ভর্তি করান কঙবাজার বায়তুশ শরফের হাফেজ বিভাগে। ছোট শিশু জিলানী এক সময় হাফেজ হওয়ার পথে। একদিন হঠাৎ মাদ্রাসায় কে বা কারা ছোট জিলানীকে পেছন থেকে ধাক্কা মারে, সে কানে মারাত্মকভাবে আঘাত পায়। কান দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝরে তাকে ভর্তি করা হয় কক্সবাজার হাসপাতালে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম হাসাতালে রেফার করা হয়। ১০ দিন হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে থাকে চরম অবহেলায়। জোটেনি চিকিৎসা। অসহায় দাদীর কাছে টাকা ছিল না। রমজান মাসে জিলানীর বিধবা দাদী তার প্রিয় নাতীকে বাঁচানোর জন্য চারিদিকে ছোটাছুটি করতে থাকে, ডাক্তারদের হাত পায়ে ধরে বলেছেন, যে করে হোক জিলানীকে বাঁচাতে হবে।

একসময় বিষয়টি মানবিক পুলিশ শওকত ভাইয়ের নজরে আসলে তিনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম প্রচার করেন। ভিডিও টি যারা দেখেছে-কেঁদেছে। ফেসবুকে ভিডিওটি দেখে শিশু জিলানীর প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার খুব কাছের প্রিয় বন্ধু ডাক্তার হুমায়ুনুর রশীদ এবং বেওয়ারিশ ফাউন্ডেশন। পুলিশ কর্মকর্তা মানবিক শওকত ভাই তো আছেনই। অর্থ দিয়ে তাকে চিকিৎসার জন্য তাঁর পাশে দাঁড়ান। আহা জীবন ! আহা বেহেস্তের ফুল শিশু! চলুন আমরা এমন নিষ্পেষিত এতিম অসুস্থ অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়াই। ওদের চোখের পানি মুছে দিই। আসুন মায়া ছড়াই, মানবিক হই। লেখক : প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধজিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামবাসীর মিলন মেলা