আরকান-রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য

| শুক্রবার , ৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ

[খ্রীষ্টীয় ১৬০০-১৭০০ অব্দ]

সপ্তদশ শতকে বঙ্গদেশের সীমানার বাইরে আরকান বা রোসাঙ্গে বাংলা সাহিত্যের চর্চা নানা কারণেই বিস্ময়কর, উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ। কী পটভূমিতে ও কারণে আরকান বা রোসাঙ্গের রাজদরবার বাংলা সাহিত্যচর্চার একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল তা অনুধাবন করতে গিয়ে মুহম্মদ এনামুল হক, ও আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ওই সময়ের রাজনৈতিক সামাজিক প্রেক্ষাপটও অনুসন্ধান করেছেন। ইতিপূর্বে রচিত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে বাংলা সাহিত্যের যে বিবরণ ও পরিচয় বিধৃত হয়েছে, তা ছিল প্রধানত হিন্দু লেখকদের রচনা সম্পর্কে। এই গ্রন্থে রয়েছে সপ্তদশ শতকে আরকানে রচিত বাংলার মুসলমান লেখকদের রচনার বিবরণ। এর ফলে বাংলা সাহিত্যের একটি অনুদঘাটিত ও অনালোচিত দিক সম্পর্কে জানা যাবে। আরেকটি কারণেও এই বইয়ের বিষয়বস্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইতিপূর্বে বাংলা সাহিত্যের যে-সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, তা ছিল প্রধানত ধর্মাশ্রিত। আরকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্যে পাওয়া গেল মুসলমান লেখকদের রচিত প্রণয়োপাখ্যানের বিবরণ। এই গ্রন্থে মধ্যযুগের মুসলমান লেখকদের যে রচনাগুলোর পরিচয় দেওয়া হয়েছে, তার অধিকাংশই ভিন্ন ভাষার সাহিত্য থেকে অনূদিত। এর আগে সংস্কৃত ভাষা থেকে অনূদিত হযয়েছে রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত ও পুরাণ। আরকান রাজসভার কবি দৌলত কাজী ও আলাওল হিন্দি ও ফারসি ভাষার প্রণয়োপাখ্যান আনয়ন করলেন বাংলা ভাষায় । বাংলা ভাষায় প্রবর্তিত হলো সাহিত্যের এক নতুন ধারা।
লেখকদ্বয় তৎকালীন সমাজ-ইতিহাসেরও পর্যালোচনা করেছেন। বিদেশাগত মুসলমান ও স্বদেশের ধর্মান্তরিত মুসলমান সমাজের মধ্যে সংমিশ্রণ প্রক্রিয়ায় এই ধর্মালম্বীদের যে বৈশিষ্ট্য গড়ে ওঠে তার পরিচয় আছে এই গ্রন্থে। পীর-পূজা, কর্মফল বা পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাস, নবজাতকের অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠান, শাস্ত্রীয় অনুশাসনের শিথিলতা-এইসব কারণে বঙ্গদেশীয় মুসলমান মানসের যে স্বাতন্ত্র গড়ে ওঠে তার স্বরূপ বিচারও করেছেন লেখকদ্বয়।
আরকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য বইয়ে সপ্তদশ শতকের মুসলমান সমাজের সাংস্কৃতিক জীবনচর্যার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়। এই সময়ের পোশাক ও অলংকারের উল্লেখ যেমন আছে, তেমনি বিধৃত হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিবরণ। আরকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য সপ্তদশ শতকে আরকান বা রোসাঙ্গে বাংলা সাহিত্যচর্চার ইতিহাস তো বটেই, সেই সঙ্গে ওই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক দলিলও বটে।
গ্রন্থনা:
শিমিন মুশশারাত

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যাটিংয়ে একের পর এক লজ্জাই উপহার দিয়ে ফিরছে বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধঅমৃতা প্রীতমের কবিতা