ব্যাটিংয়ে একের পর এক লজ্জাই উপহার দিয়ে ফিরছে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে লজ্জার একটি আসর শেষ করল বাংলাদেশ। ওমান এবং পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে সুপার টুয়েলভ পর্বে জায়গা করে নিলেও সেখানে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ দল। সুপার টুয়েলভ পর্বে একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। উল্টো শেষ দুই ম্যাচে গড়েছে লজ্জার রেকর্ড। দক্ষিণ আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শতরানের নিচে অল আউট হয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৪ রানে অল আউট হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৭৩ রানে ফিরেছে বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যান। প্রবাদ রয়েছে কোন একজন মানুষ নাকি গুলি খেয়ে মারা যাওয়ার পর মানুষ বলতে লাগল ভাগ্য ভাল চোখে গুলি লাগেনি। বাংলাদেশের বেলায়ও যেন সে প্রবাদ যথার্থই। গতকাল ৭৩ রানে অল আউট হওয়ার পর হয়তো কেউ কেউ বলবেন ভাগ্য ভাল আর তিন রান আগে অল আউট হয়নি। নাহয় সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় ডুবতে হতো। অন্তত সে লজ্জার হাত থেকে বাঁচা গেল।
এমনিতেই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বন্দী হয়ে আছে ব্যর্থতার বলয়ে। শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচটি বাদ দিলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে প্রাপ্তি কেবলই হতাশা। ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যানের খারাপ সময় যেতেই পারে। তাই বলে সব ব্যাটসম্যান একসাথে ব্যর্থতার মিছিলে শামিল হবে সেটা বড়ই কষ্টদায়ক। তার উপর ব্যাটসম্যানরা যখন ভুল শট এবং খামখেয়ালী শট খেলে বারবার ফিরে আসে তখন কষ্টটা আরো বাড়ে। বারবার একই ভুল করে গেছে ব্যাটসম্যানরা। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি ব্যাটসম্যানদের মাঝে। বিশেষ করে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা যেভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং করে ফিরে এসেছে তা ছিল বড়ই দৃষ্টিকটু। বিশেষ করে সুপার টুয়েলভ পর্বে যেখানে সবচাইতে বেশি দায়িত্বশীল ব্যাটিং করা দরকার ছিল সেখানে দায়িত্বহীনতার পরিচয়টা বেশি দিয়েছে টাইগার ব্যাটসম্যানরা। শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৭১ রান এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। তবে শেষ দুই ম্যাচে লজ্জার ষোলকলা পুরন করেছে ব্যাটসম্যানরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৪ রানে অল আউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে প্রোটিয়াস পেস আক্রমণের সামনে ছিল একেবারে অসহায়। আর যে স্পিন নিয়ে বাংলাদেশের এত গর্ব সেই স্পিনে আরো বেশি নাকাল হয়েছে টাইগার ব্যাটসম্যানরা। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার তাবারেজ শামসির সামনে যেন পা কেপেছে টাইগার ব্যাটসম্যানদের। আর গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেতো দাঁড়াতেই পারলনা। ভাগ্য ভাল যে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সবচাইতে কম রানে অল আউট হয়নি। ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ভার্সনে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর ৭০। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কলকাতায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। গতকাল তার চাইতে মাত্র ৩ রান বেশি করতে পেরেছে টাইগাররা। গতকাল মাত্র ১৫ ওভার খেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচাইতে কম ওভারে অল আউট হয় বাংলাদেশ। তবে গতকাল আরো একটি লজ্জার রেকর্ড গড়েছে টাইগাররা। আর তা হচ্ছে এক বছরে চারবার শতরানের নিচে অল আউট হওয়া। এবছরের এপ্রিলে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে ৭৬ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আর ৫ সেপ্টেম্বর সেই নিউজ্যিলান্ডের বিপক্ষে ৭৬ রানে আরেকবার অল আউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে গত ২ নভেম্বর ৮৪ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। আর গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৩ রানে অল আউট হয়ে লজ্জার ষোলকলা পূরণ করে বাংলাদেশ। অনেক বড় প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষটা হলো একেবারে লজ্জার চাদর মুড়িয়ে। নামিবিয়ার মত দল যেখানে বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্ব থেকে জয় নিয়ে দেশে ফিরছে সেখানে বাংলাদেশ ফিরছে শতভাগ হারের লজ্জাকে সঙ্গী করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ নারী দলের নতুন অধিনায়ক নিগার সুলতানা
পরবর্তী নিবন্ধআরকান-রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য