‘আমার তো সব শেষ’

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১০ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। অদূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন রাজু। কিছুক্ষণ পর পর চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমার তো সব শেষ’। গতকাল সকালে নগরের হালিশহর আর্টিলারি সংলগ্ন গোডাউন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের সময় এ দৃশ্য দেখা গেছে। তার কসমেটিকসের দোকান রয়েছে মার্কেটে। ৭/৮ লাখ টাকার পণ্য ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে। শুধু রাজু নয়। তার মতো ক্ষতিগ্রস্ত অন্য ব্যবসায়ীদের চোখেও পানি। চোখের সামনেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। দেখে যাওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারছিলেন না তারা। যা তাদের কষ্ট বাড়িয়ে দিচ্ছিল বহু গুণ।
গতকাল সকালে আগুনে মার্কেটের ৪৬টি দোকান পুড়ে গেছে। সকাল ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। এরপর পুড়ে যাওয়া দোকানের মালিকগণ ছাইয়ের স্তূপ সরিয়ে কিছু খুঁজছিলেন আশা, অক্ষত কোনো মালামাল পাওয়া যাবে। অবশ্য হতাশ হতে হয়েছে তাদের। কান্নারত এক দোকানদার জানালেন, পাহাড়তলী বাজার থেকে চার লাখ টাকার মালামাল বাকিতে এনেছেন কয়েক দিন আগে। সেই মালামাল পুড়ে গেছে। কর্জ কীভাবে শোধ করবেন? সেই প্রশ্ন করছিলেন তিনি। মার্কেটের বোরকা ও হিজাবের দোকানের মালিক শাহনেওয়াজ বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত আসি। ধোঁয়ার জন্য ঢুকতে পারিনি। ছয়-সাত লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একটা সুতোও বের করতে পারিনি।
তিনি বলেন, করোনার জন্য মাঝখানে দীর্ঘদিন ব্যবসা করতে পারিনি। পুরনো মার্কেট ছিল, সেটা ভেঙে দিয়েছে। এখন নতুন জায়গায় আসছি। সেখানেও গুছাতে সময় লেগেছে। নানা ঝামেলার কারণে প্রায় দুই বছর আমাদের ব্যবসা মন্দা ছিল। এ অবস্থায় সবকিছু হারিয়ে যে ক্ষতি তা পূরণ করা কঠিন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করছে। তাদের অবস্থা তো আরো শোচনীয় হবে।
একটি কাপড়ের দোকানের মালিক শাহাবুদ্দিন জানান, ১২-১৪ লাখ টাকার কাপড় পুড়ে গেছে। শিশুদের কাপড় বিক্রি হতো রায়হানের দোকানে। তারও চার-পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মো. আলী নামের আরেকজন কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ৩-৪ লাখ টাকার কাপড় পুড়ে গেছে।
মুদির দোকানদার মো. আলী জানান, দোকানে থাকা ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মালামাল ছাই হয়ে গেছে।
স্টেশনারী দোকানদার রিয়াদ বলেন, ২০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। এর মধ্যে এক লাখ টাকার সিগারেটও ছিল।
মো. রিপন বলেন, আমার কাপড়ের দোকান ছিল। তিন-চার লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। যখন আগুন লেগেছে তখন দোকান বন্ধ থাকায় মালামাল তেমন কিছু বের করতে পারিনি।
২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার কাপড় পুড়ে গেছে ব্যবসায়ী শহাবুদ্দিনের। দোকান থেকে কিছুই বের করতে পারেননি তিনি। তার ব্যাংক লোন রয়েছে। প্রতি মাসে কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। পুঁজি হারিয়ে এখন অনেকটা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। কীভাবে ব্যাংক লোন পরিশোধ করবেন সেই চিন্তায় চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেমিফাইনালের রোমাঞ্চ শুরু
পরবর্তী নিবন্ধনগরীর ১১ মার্কেটে বসানো হচ্ছে ভ্যাট বুথ