আবারো সক্রিয় তেল চোর চক্র

বন্দরের বহির্নোঙরে ।। শত শত জাহাজ ঘিরে অপতৎপরতা ।। কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২২ at ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির জের ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ তেল চোর চক্র। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা দেশি বিদেশি শত শত জাহাজকে ঘিরে চক্রটির অপতৎপরতা চরম আকার ধারণ করেছে। গভীর সাগর থেকে উপকূল পর্যন্ত সর্বত্র সক্রিয় চোরাচালানি চক্র। এরা রাষ্ট্রায়াত্ত তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর কোটি কোটি টাকার তেল গায়েবের পাশাপাশি জাহাজের চোরাতেলের বেসাতির সাথে জড়িত। জ্বালানি তেল চোরাচালানি চক্রের অপতৎপরতায় সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ তেলসহ চোরাচারালানি চক্রের একাধিক সদস্য আটক হলেও অনেকে রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
দেশের জ্বালানি তেল সেক্টর পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রিক পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েল কোম্পানি ডিলারের মাধ্যমে দেশে জ্বালানি তেল বাজারজাত করেন। দেশে গ্যাসফিল্ডের কনডেনসেট প্রক্রিয়া করে কয়েকটি বেসরকারি রিফাইনারিতে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হলেও তা উক্ত তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়। আমদানিকৃত তেলের বিপরীতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে চড়া অংকের ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু সংঘবদ্ধ একটি চক্র বিভিন্ন জাহাজের চোরাতেল ক্রয় করে দেশে বাজারজাত করছে।
পতেঙ্গা এলাকায় প্রভাবশালী একাধিক চক্র এই তেল চোরাচালানের সাথে জড়িত। চট্টগ্রামে জাহাজবোঝাই চোরাতেল ধরা পড়ার ঘটনার পর র‌্যাব একটি তালিকা প্রস্তুত করে তেল চোরাচালানীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছিল। ওই সময় গা ঢাকা দেয়া চোরদের অনেকেই বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা দেশি বিদেশি জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল কিনে নিয়ে চক্রটি বাজারজাত করে। এরা বিভিন্ন মাছ ধরা ট্রলার, নৌকার কাছে এসব তেল বিক্রি করে। আবার বিদেশি বিভিন্ন জাহাজেও এসব তেল বিক্রি করা হয়। চোরাচালানীদের এই কেনাবেচায় কোটি কোটি টাকার ট্যাঙ ফাঁকি দেয়ার মহোৎসব চলে।
পতেঙ্গা এলাকায় তেল চোরাচালানীদের বেশ বড়সড় আস্তানা রয়েছে। এই চক্রের সদস্যরা পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাট এলাকায় আস্তানা গড়ে সেখান থেকে জ্বালানি তেল এবং ভোজ্য তেল কেনাবেচার কার্যক্রম চালায়। ১৫ নম্বর ঘাট এলাকায় চক্রটির দাপটে সাধারণ মানুষ অসহায় বোধ করে। গতকাল ১৫ নম্বর এলাকায় এয়ারপোর্ট ব্রিজের নিচে চোরাচালানি চক্রের সদস্যদের আসা যাওয়ার সুবিধার জন্য ব্রিজের রিটেইনিং ওয়াল ভাঙতে দেখা যায়। এসময় স্থানীয়দের পক্ষ থেকে বাঁধা দেয়া এবং ছবি তোলা হলে তারা গা ঢাকা দেয়। তবে গভীর রাতে চক্রের সদস্যরা আবারো রিটেইনিং ওয়াল ভেঙে নিজেদের সুবিধামতো পথ ঘাট তৈরির উদ্যোগ নেবে বলেও স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল কোস্টগার্ডের একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। বহু চোরাচালানি ধরা পড়েছে। বিপুল পরিমান জ্বালানি এবং ভোজ্যতেলও জব্দ হয়েছে। কোস্টগার্ড এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, আমাদের টিম রাতে দিনে চব্বিশ ঘণ্টাই চোরাচালান বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। সদরঘাট নৌ থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। দাগি চোরাচালানীদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো উৎপাত শুরু করে। তবে পুলিশ কিংবা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চোরাচালানের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে বলেও পুলিশ দাবি করেছে।.

পূর্ববর্তী নিবন্ধউপহারের স্বর্ণালংকার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বিয়ের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে এসএ পরিবহনের ৩ কর্মকর্তা আটক