আত্মতৃপ্তি, আত্মবিশ্বাস, আত্মঅহংকার ও আত্মমর্যাদা

সুব্রত কুমার নাথ | বৃহস্পতিবার , ২৩ জুন, ২০২২ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর সকল মানুষ বস্তুগত বা অবস্তুগত জিনিসের প্রতি অত্যন্ত দুর্বল। মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি যখন অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অর্জন করতে পারে, তখনই তার মধ্যে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ পায়।

আত্মতৃপ্তি পেলে মানুষের মন প্রশান্তিতে ভরে যায়। যার আত্মতৃপ্তি নেই, সে কখনো সুখী নয়। যাদের মন আত্মতৃপ্তিতে ভরপুর থাকে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। আত্মতৃপ্তি মানুষের মানসিক শক্তির উৎস। আত্মতৃপ্তির সমষ্টিতে গড়ে ওঠে আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস মানে নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। আত্মতৃপ্তি না থাকলে কাজে আত্মবিশ্বাস আসে না। আত্মবিশ্বাস চরমে পৌঁছলেই জীবনে সফলতার শীর্ষে উঠা যায়। কিন্তু আত্মবিশ্বাসে যখন ভাটা পড়ে, আত্মবিশ্বাসের আস্থা যখন নড়বড়ে হয় কিংবা আত্মবিশ্বাস ভিন্ন পথে প্রবাহিত হয় তখনই আমাদের মধ্যে অহংকারের জন্ম হয়। ‘আত্মঅহংকারবোধ’ জিনিসটা ভীষণ ভয়ংকর। আত্মঅহংকারবোধে অন্ধ হয়ে অনেকে অন্যায়, দুর্নীতি ও বৈষম্যমূলক আচরণে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি, অহংবোধে তাড়িত হয়ে অনেকে স্বার্থের জন্য খুব কাছের মানুষকেও দূরে ঠেলে দেয়। এক সময় এসব দুর্ব্যবহারের কারণে তারা মাৃনুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং নিজেদের খুবই একাকিত্ব মনে হয়। আত্মতৃপ্তি ছাড়া সামনে এগিয়ে চলা অসম্ভব।

তবে আত্মতৃপ্তিতে আত্মহারা হয়ে গেলে সফলতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। আত্মতৃপ্তি পেলে খুশিতে আত্মহারা হওয়া যেমন উচিত নয়, আবার, আত্মতৃপ্তি না পেলেও হতাশ বা নিস্তেজ হয়ে পড়া উচিত নয়। আবার, অতি আত্মবিশ্বাসও মানুষকে বিপথগামী করে তোলে। এরপরও বলতে হয়, জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে আত্মবিশ্বাস থাকা অপরিহার্য। এর অন্যথা হলে, আমরা সুন্দর উপভোগ্য জীবন থেকে বঞ্চিত হব এবং জীবন চলার পথ থেকে সটকে যেতে পারি। মানুষ তার আত্মঅহংকারকে বিসর্জন দিয়ে আত্মতৃপ্তি ও আত্মবিশ্বাসকে লালন করে এগিয়ে যেতে পারলে আত্মমর্যাদা বাড়বে। আত্মমর্যাদা মানে নিজের প্রতি মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখা।

আত্মমর্যাদার অভাবে মানুষের মধ্যে হীনম্মন্যতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে নেতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ পায়। এর থেকে উত্তরণের জন্য নিজেদের সকল ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক চরিত্রের সমন্বয়ে মানুষের মধ্যে এই আত্মমর্যাদাবোধ সৃষ্টি হয়। এভাবেই, আত্মবিশ্বাসের জোরে পরিবার ও সমাজে সবাই আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন হয়ে বাঁচুক, মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ দ্বারা সুশীল সমাজ গড়ে ওঠুক- এটাই প্রত্যাশা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-সিলেট রেল-লাইন: অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে
পরবর্তী নিবন্ধশৌখিন মন ভুলছে মানবতা