আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করেছে

পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশে মির্জা ফখরুল

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ মার্চ, ২০২২ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যার যা অবদান, প্রত্যেককে প্রত্যেকের অবদান স্বীকার করতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমান, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান স্বীকার করতে হবে। স্বীকার করতে হবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি দুই সন্তান নিয়ে এই চট্টগ্রামে ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। তাঁকে রেখে জিয়াউর রহমান ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বেরিয়ে যান এবং পরদিন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। আমরা যখন এসব কথা বলি তখন আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে।
তিনি গতকাল রোববার বিকেলে নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘মুক্তিযুদ্ধের সূচনা’ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী উদযাপন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবের রহমান শামীমের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার। বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, এই চট্টগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এই সরকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য আজ থেকে নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হল। আসুন, আমরা সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তীব্র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করছে। এক ব্যক্তিকেই মুক্তিযুদ্ধের সব বানাচ্ছে, যে ব্যক্তি তখন দেশেই ছিলেন না। দেশে ছিলেন জিয়াউর রহমান। এই আওয়ামী লীগ সুচতুরভাবে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন দিনের ভোট আগের রাতে হয়ে যায়। এখন বলছে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান ? যে সংবিধান তারা নিজেদের ইচ্ছামতো করে কাটাছেঁড়া করে নিজেদের মতো বানিয়ে নিয়েছে, সেই সংবিধান অনুযায়ী নাকি নির্বাচন হবে। পরিস্কারভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে বলছি, সময় শেষ, যতই ডিগবাজি খান, কোনো লাভ হবে না।
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকবে না। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এখন আর কার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে তা দেখার বিষয়। তাদের নির্দেশে গুম খুন হয়েছে। এখন জনগণের নিষেধাজ্ঞা আপনাদের ওপর আসবে। এই নিষেধাজ্ঞা লজ্জার।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে সরকার হঠাৎ ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিল। মার্কিন মন্ত্রী এসে ধমক দিল আর অমনি সরকার ডিগবাজি খেয়ে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়ে দিল। আসলে এদের কোনো চরিত্র নেই। জনগণের প্রতি ভালোবাসা নেই। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে শুধু। আর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করে। এদের পরাজিত করতে হবে। আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। সেদিন আওয়ামী লীগের কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা করেনি, এটাই তাদের একমাত্র ব্যর্থতা। তারা তখন আত্মসমর্পণ করেছিল। একমাত্র মেজর জিয়াউর রহমান সেদিন প্রতিবাদ করেছিলেন। আওয়ামী লীগ যেখানে পরাজিত, মেজর জিয়া সেখানে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। দেশের মানুষ মেজর জিয়ার ঘোষণা শুনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে মেজর জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিলেন, দেশের ভেতরে থেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত, অথচ মেজর জিয়া ও তার সৈনিকরা উপস্থিত। তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। সকল বিদেশি গণমাধ্যমে সেদিন শহীদ জিয়ার স্বাধনতার ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের বইতেও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার কথা লেখা আছে। বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সেদিন শুনেছিলেন। আজ আমাদের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হল না ? কারণ আওয়ামী লীগ জানে, আমরা সেখানে যেতে পারলে এখানের চেয়ে অনেক বেশি লোক সমাগম হত। কিন্তু আজ ঘোষণা দিচ্ছি, আমরা প্রত্যেক বছর চট্টগ্রামে ২৭ মার্চ পালন করব। আগামী বছর ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের সামনে পালন করব।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা যেতে চেয়েছিলাম মেজর জিয়াউর রহমান যে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন এবং সেই ঘোষণা শুনে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেইস্থানে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পেটুয়া বাহিনী আমাদের সেখানে যেতে দেয়নি। আমরা যদি যেতে পারতাম তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে দেশবাসীকে বলতাম যে, এই বেতারকেন্দ্র থেকেই মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ভয় পেয়ে আমাদের যেতে দেয়নি।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আওয়ামী লীগ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত রয়েছে। যে ভোট আর মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল সেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন নাই।
মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমাদের এই জনসভা ফ্যাসিবাদ পতনের জনসভা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জনসভা। শহীদ জিয়া চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। আজকের সমাবেশ থেকে এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আন্দোলনের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।
মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, এই চট্টগ্রাম থেকে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এই চট্টগ্রাম থেকেই আওয়ামী সরকারের পতন হবে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার।
এম এ সালাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। আসলে তার বক্তব্যের কোনোটাই সত্য নয়। শেখ মুজিবুর রহমান যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকে তাহলে ভুট্টুর সাথে কিসের আলোচনা হচ্ছিল?
আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরাতে ও বেগম খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ মুক্তির আন্দোলনে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করতে হবে।
জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, এই সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না। তাদের হঠিয়ে দিতে চট্টগ্রাম প্রস্তুত।
গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে মেজর জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হয়েছিল। আজকে আওয়ামী লীগ সেই ইতিহাসকে বিকৃত করছে।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে নাই। সেদিন মেজর জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, মুক্তিযোদ্ধার দল, স্বাধীনতার ঘোষকের দল। আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে দুই নম্বর দল।
শামা ওবায়েদ বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজাকার সরকারের কম্পন শুরু হয়ে গেছে। আজকে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে যেতে বাধা দিয়েছে। কিন্তু সারা বাংলাদেশই কালুরঘাটে পরিণত হবে।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫, ২৬ ও ২৭ মার্চ আওয়ামী লীগের কোনো ইতিহাস নেই। সেখানে শুধু মেজর জিয়ার ইতিহাস।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশীদ, সদস্য নুরুল ইসলাম নয়ন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, কঙবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ফেনী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাল উদ্দীন আলাল, লক্ষীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাবুদ্দীন সাবু, রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দিপেন তালুকদার, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহম্মেদ খান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মামুনুর রশীদ মামুন, বান্দরবন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা ও চট্টগ্রাম আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক এড. বদরুল আনোয়ার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতিই বিএনপির একমাত্র অবলম্বন
পরবর্তী নিবন্ধমানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির নালায় ঝাঁপ