অসুস্থ শিশুদের নিয়ে বাবা মায়ের আতঙ্কের প্রহর

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে আগুন, ১ ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাঁচটি ইউনিট এক ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় কারো হতাহতের খবর না মিললেও পুরো হাসপাতালজুড়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সহকারী তালহা বিন জসিম বলেন, গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটের দিকে হাসপাতালের পঞ্চম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন লাগে। খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট ছুটে যায়। পরে সিদ্দিক বাজার এবং তেজগাঁও থেকে আরো দুটো ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তাদের চেষ্টায় বেলা ২ টা ৩৯ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। খবর বিডিনিউজের।

হাসপাতালের একটি ভবনে আগুন লাগার পর ভোগান্তি আর আতঙ্কের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা কেটেছে অসুস্থ শিশু আর স্বজনদের। আগুন লাগার খবর পেয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই শিশু রোগীদের কোলে স্বজনদের ভিড় দেখা যায়। তখনও ভবন থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। যেহেতু শিশু হাসপাতাল, রোগীরা সবাই শিশু। ওয়ার্ড থেকে নামিয়ে আনার পর প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তাদের কাউকে কাউকে দেখা গেল বাবা বা মায়ের কোলে নেতিয়ে আছে। কেউ কেউ চিৎকার করে কাঁদছে। কারো স্বজন কাঁদো কাঁদো মুখে আল্লাহ আল্লাহকরছেন।

সাড়ে তিন বছর বয়সী রিহানের প্রস্রাবের নালীতে অস্ত্রোপচার হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল। ক্ষতস্থান এখনও শুকায়নি, হাতে স্যালাইনের কেনুলা লাগানো। ওই অবস্থায় তাকে নিয়ে বাবামাকে বসে থাকতে দেখা গেল শিশু হাসপাতালে ঢোকার মুখে গাছের তলায়। রিহানের কাঁদারও শক্তি নেই, প্রচণ্ড রোদ আর গরমে নেতিয়ে পড়েছে অসুস্থ শিশুটি। এ অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে অন্য হাসপাতালে যাবেন না এই হাসপাতালেই থাকবেন, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না তার বাবামা। অস্ত্রোপচারের কাঁচা ক্ষতসহ বাচ্চাকে নিয়ে এভাবে বেরিয়ে আসায় তার কোনো ক্ষতি হল কিনা, তা নিয়েও তারা শঙ্কিত। নাজমুল নামের এক অভিভাবক বললেন, বিব্লকের পাঁচতলায় আগুন লাগার পর পুরো হাসপাতালেই এরকম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা ছিলেন চতুর্থ তলায়। জিনিসপত্র সবকিছু রেখেই কোনোরকমে অসুস্থ বাচ্চাকে কোলে নিয়ে তারা নিচে নেমে এসেছেন। বাচ্চাটা খুবই অসুস্থ, তার স্যালাইন চলছিল, প্রস্রাবের রাস্তায় ক্যাথেটার লাগানো আছে।

হাসপাতালের ফটক, নিচতলার বারান্দা আর গাছের নিচে গরমের মধ্যে শিশুদের নিয়ে বসে ছিলেন বাবামায়েরা। বেশিরভাগ শিশুর হাতে দেখা গেল কেনুলা লাগানো। কারো কারো নাকে মুখেও নল লাগানো। শিশুদের কেউ কেউ হাঁপাচ্ছে, কেউ কেউ নেতিয়ে পড়েছে। সাত মাসের শিশু সানবিন গরমে ঘামছিল আর কাঁদছিল। মা সাবিনা ইয়াসমিন জানালেন, তার বাচ্চার শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া। তিন দিন আগে তারা হাসপাতালে এসেছেন। আগুন লাগার পর কোনোরকমে দৌড়ে নেমেছেন। এখন ধোঁয়া আর ধুলাবালিতে সানবিনের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. ফখরুদ্দীন জানান, বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে হাসপাতালে এসে তারা দেখেন, কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউ ইউনিটে এসিসহ বেশ কিছু ইকুইপমেন্টে আগুন জ্বলছে। তারা প্রথমে সেখান থেকে রোগী ও লোকজনকে বের করেন। পরে আগুন নির্বাপণ শুরু করেন। এর মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একটি অক্সিজেনের পাইপ থেকে অক্সিজেন বের হতে থাকলে আগুন বাড়তে থাকে। পরে হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ লাইন বন্ধ করে এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন নেভানো হয়।

কোত্থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ফখরুদ্দীন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আইসিইউর একটি এসি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে এরপরেও আমরা তদন্ত করব।

হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যেখানে আগুনের সূত্রপাত হয়, সেই আইসিইউতে সাতজন রোগী ছিল। প্রত্যেক রোগীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বি ব্লকের ১৯৪টি বেডে ১৭৪ জন রোগী ছিল। তাদেরও নিরাপদে নামিয়ে নেওয়া হয়। শিশু হাসপাতালের অন্য ভবন আর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট মিলিয়ে রাখা হয়েছে রোগীদের। পরিচালক জানান, বিদ্যুৎ ও অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ করছেন হাসপাতালের প্রকৌশলী, ডিপিডিসি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। একটা একটা করে ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ ও অক্সিজেন সরবরাহ চালু করবেন তারা। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা তিনি দিতে পারেননি।

অগ্নিকাণ্ডের পর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানাও ছুটে আসেন হাসপাতালে। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ভর্তি কোনো রোগীর কোনো ক্ষতি হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতাপদাহে লবণের মাঠে সুবাতাস
পরবর্তী নিবন্ধআট মোটরসাইকেলে ১৫ বন্ধু যাচ্ছিল কক্সবাজার