অলংকৃত কচু ক্যালেডিয়াম

জায়েদ ফরিদ | সোমবার , ১২ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

(পূর্ব প্রকাশিতর পর)
‘অ্যালোকেসিয়া’ স্পষ্ট শিরার মানকচু (অষড়পধংরধ সধপৎড়ৎৎযরুড়ং) ধরনের বড়ো গাছ যার পাতা থাকে ঊর্ধ্বমুখী। তবে এর ব্যতিক্রমী কিছু সুন্দর ক্ষুদ্রাকার হাইব্রিডও আছে যেমন ‘অ্যালোকেসিয়া গ্রিন ভেলভেট’ যেগুলো অনেকে শখ করে টবে লাগান। ‘কলোকেসিয়া’ [ঈড়ষড়পধংরধ বংপঁষবহঃধ (খ.) (খ.) ঝপযড়ঃঃ] আমাদের চারদিকের সাধারণ কচুগাছ যার পাতা ঢলে পড়া অবস্থায় থাকে, কন্দ (ঈড়ৎস, ঈড়ৎসবষ) খাদ্যোপযোগী। ‘জ্যান্থোসোমা’ কচু গাছও আমাদের দেশে আছে যার দুটো প্রজাতি বেশি দেখা যায়, (মৌলুবি কচু, ঢধহঃযড়ংড়সধ ংধমরঃঃরভড়ষরঁস) এবং (বেগনি ডাঁটার সিঙ্গাপুরি কচু, ঢধহঃযড়ংড়সধ ারড়ষধপবঁস)। মৌলুবি কচু কিউবা, পোর্টোরিকো এবং আফ্রিকায় মেটে আলু বা খাম আলুর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। এর কন্দের চারদিকে আলুর মতো ‘কর্মেল’ থাকে যা বেশ উপাদেয়। কাসাভা বা আলুর পরেই এর স্থান। সিঙ্গাপুরি কচু সাধারণ খাদ্য ছাড়াও ডায়াবেটিস ও ব্যথা নিরসনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এখন ভাবি ‘ক্যালেডিয়াম’ জেনাসের এই কচুগুলো [ঈধষধফরঁস নরপড়ষড়ৎ (অরঃড়হ) ঠবহঃ.] এতকাল আগে থেকে আমাদের দেশে দেখা যেত কী করে! ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেল, এসব অলংকৃত কচুগুলো আসলে হাইব্রিড প্রজাতির। এই হাইব্রিড যে প্রাকৃতিকভাবে হতে পারে না তা নয়। বাগান অলংকরণের জন্য এটি একটি মোক্ষম উপাদান। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে কন্দ-ব্যবসায় বা বাল্ব-ট্রেডের অতি পুরাতন ইতিহাস। লাল-সাদা ছিট-কচুর প্রথম রেকর্ড দেখা যায় ১৮৭৭ সালে, যেগুলো ব্রাজিলের ম্যাডিয়েরা নদীর ধার থেকে সংগৃহীত হয়েছিল।
আমেরিকায় হাইব্রিড তৈরিতে বড়ো ধরনের গবেষণা করেছেন ফ্লোরিডার ড. হেনরি নার্লিং। বিংশ শতাব্দির প্রথম দশকে তিনি সরু কাঠ-নির্মিত ‘লাত হাউস’ ও বেডিংয়ে প্রতি বছর ২ লক্ষ হাইব্রিড উৎপাদন করেছেন, যার কয়েক ডজন এখনো প্রচলিত। ১৮৯৯ সালে শিকাগো ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে হেনরি নার্লিং দেখেছেন ১০০টা ফ্যান্সি হাইব্রিড প্রজাতির ক্যালেডিয়াম যেগুলো ব্রাজিল থেকে সংগ্রহ করেছিলেন ‘ক্যালেডিয়াম কিং’ আডলফ্‌ লিজ। লিজ প্রায় হাজারখানেক হাইব্রিডের নামকরণ করেছেন যেগুলো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখনো নার্সারিতে বিক্রি হয়। এক রিপোর্টে জানা যায় ১৯০৩ সালে এসব হাইব্রিডের মূল্য ছিল তখনকার দিনের ১০০ ডলার! ক্যালেডিয়াম হাইব্রিডের ২০ ধরনের বাল্ব-ট্রেডই বেশি দেখা যায় যদিও কিছু ব্যবসায়ী শতখানেক হাইব্রিড নিয়ে নাড়াচাড়া করেন।
ক্যালেডিয়াম জেনাসে ৭টি প্রজাতি রয়েছে। এর দুই ফর্মের একটিতে পাতা বড়ো হার্ট আকৃতির (ঈধষধফরঁস নরপড়ষড়ৎ (অরঃড়হ) ঠবহঃ.) অন্যটি বর্শা আকৃতির চিকণ (ঈধষধফরঁস ঢ়রপঃঁৎধঃঁস ক.কড়পয ্‌ ঈ.উ.ইড়ঁপযল্ক)। তবে বেশিরভাগ হাইব্রিড তৈরি হয়েছে বাইকালার প্রজাতি থেকে। ক্যালেডিয়াম বাইকালার প্রথম রেকর্ড করা হয় ১৭৮৯ সালে। এর শতশত হাইব্রিডের মধ্যে কিছু আকর্ষণীয় হাইব্রিডের পরিচয় নিচে দেয়া গেল:
১ ক্যালেডিয়াম ‘গ্যালাক্সি’ সাদা শিরাসহ নক্ষত্রের মতো অজস্র সাদা স্পট
২ ক্যালেডিয়াম ‘মেরি মোয়ার’ সাদা পাতা, সবুজ শিরা, লাল ফোঁটাসহ
৩ ক্যালেডিয়াম ‘স্কার্লেট পিমপারনেল’ – শিরা বরাবর বিস্তৃত লাল, হার্ট আকৃতির
৪ ক্যালেডিয়াম ‘ক্যানডিডা’ সাদা চকের মতো পাতা, কিনারা ও শিরা সবুজ
৫ ক্যালেডিয়াম ‘রয়াল ফ্ল্যাশ’ সবুজ পাতার ভেতর বিস্তৃত এলাকা জুড়ে লাল রঙ
৬ ক্যালেডিয়াম ‘ফিয়েস্টা’ লাল শিরা, কিনারা সবুজ (সাবিত্রী বা সধবা কচু)
৭ ক্যালেডিয়াম ‘ফ্লোরিডা ক্লাউন’ সাদা-লাল ছিট (ছিট-কচু)
৮ ক্যালেডিয়াম ‘অ্যারন’ সবুজ পাতা সাদা শিরা (বিধবা কচু?)
ক্যালেডিয়াম গাছ দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মে, উচ্চতা দুই ফুটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ভেজা স্যাঁতসেতে মাটিতে অল্প সূর্যকিরণে ভালো থাকে। এদের অনায়াসে টবে রাখা যায়, জানালার পাশে যেখানে আলো কম আসে। বাথরুম বা রান্নাঘরে রাখলে মন্দ নয় কারণ সেখানে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। যে কোনো কন্টেইনারে, এমনকি স্টিল বা টিনের কন্টেইনারেও এরা জন্মাতে পারে, শুধু খেয়াল রাখতে হবে যাতে পাত্রে জল জমে না থাকে। সেটা বোঝার জন্য আঙুল দিয়ে মাটি বা পিট স্পর্শ করলে যদি হাতে লেগে যায় তবে আর জলের দরকার নেই। শুকনো মনে হলে জল দিতে হবে নইলে পাতা হলুদ হয়ে মরে যেতে পারে। মাসে একটা বা দুটো নতুন পাতা বের হয়, ফুল হয় অন্যান্য কচুর মতো মঞ্জরিপত্রের ভেতর স্প্যাডিক্সে যা দেখতে সুন্দর নয়। এগুলো কেটে না ফেললে গাছে পুষ্টির ঘাটতি হয় এবং এতে পাতার বর্ণিল সৌন্দর্য ব্যাহত হয়। এদের সহজেই কন্দজ বিস্তার করা যায়, শীতের আগে পরে। ফ্লোরিডাতে পৃথিবীর সিংহভাগ কন্দ বিক্রির জন্য বাজারজাত করা হয়। সাধারণভাবে একে কন্দ বললেও এটা একপ্রকার স্ফীতকন্দ (ঞঁনবৎ) টিউবার, করম্‌ বা বালব্‌ নয়। মাটিতে কন্দ লাগানোর সময় কুঁড়ি বের হবার জায়গাটা উপরের দিকে রেখে ৩ আঙুল মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। তবে কন্দের চোখ নিচের দিকে থাকলেও তা থেকে গাছের জন্ম হয় কিন্তু দীর্ঘদিন সময় নেয়।
কচুর পাতায় যে পোকা দেখেছিলাম শৈশবে সেটা একপ্রকার মথ (অমৎরঁং পড়হাঁষাঁষর, ঐধশি গড়ঃয) যেগুলো মিষ্টি আলু এবং কলমি গাছেও দেখা যায়। দেহের থেকেও এদের শুঁড় লম্বা হয় যে কারণে এরা টিউব জাতীয় ফুলে পরাগায়ন করতে পারে। কচুর পাতা, বিশেষত মুখিকচুর পাতা খেয়ে এদের শূককীট বড় হয়। কৃষিতে অনেক উপকারি ভূমিকা আছে এই মথের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাশেদ রউফ-এর অন্ত্যমিল
পরবর্তী নিবন্ধসকালের অপেক্ষা সকাল না আসা দিনে