খেলা

সত্যব্রত বড়ুয়া | সোমবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ছেলেমেয়েরা যেমন খেলতে ভালোবাসে তেমনি ভালোবাসে বুড়োরাও। বাবার সাথে আমি খেলতাম লুডু খেলা। হেরে গেলে এতোই উত্তেজিত হয়ে যেতাম যে ভুলে যেতাম এই ব্যক্তিটি আমার বাবা। একবার বাবাকে বলেছিলাম, তুমি একটা চোর। চুরি করে আমার গুটি কেটেছো। তিনি বলতেন, তুই ব্যাটা চোরের বাচ্চা ডাকাত।

বড়দি, ছোটদি খেলতেন পুতুল খেলা। তাঁদের পুতুল খেলা দেখে খুব মজা পেতাম। তাঁরা পুতুলের সাথে বকবক করে কথা বলতেন। রান্না করে আমাকে ডাকতো। আমি দৌড়ে এসে দিদিদের তৈরি করা মাছ, মাংস, তরকারি আর ডাল খেতাম। সবটাই ছিলো অভিনয়। তবে আমরা তা ভুলে যেতাম। আমাদের কাছে ছিলো সত্যি। একবার আমার গলায় ইলিশ মাছের কাঁটা বিঁধে গেলো। একটা পুতুল এসে আমার গলায় হাত বুলিয়ে দিতেই সে কাঁটা চলে গেলো। আমি বড়দি, ছোটদিকে বললাম যে এখন হতে এই পুতুলটিকে আমি ডাকবো কাঁটাদি। এখনকার দিদিরা পুতুল খেলে না। তারা স্মার্ট ফোনে খেলে অন্য খেলা।

অনেকেই বলে, মেয়েরা নাকি ছেলেদের সাথে প্রেমের খেলা খেলে। মানে তাদের খেলায়। কথাটা সব ক্ষেত্রে সত্য না হলেও অনেকাংশে সত্য। আমার ক্ষেত্রে এটা ছিলো উল্টো। আমি সব সময় তাদের খেলিয়েছি। এই প্রেমের খেলা খেলে আমি আনন্দ পেতাম। অদ্ভুত ব্যাপার হলোএই ছ্যাঁকা খাওয়া মেয়েরা কখনো একথা প্রকাশ করতোনা। আমার সাধু ভাবমূর্তি তাই ঠিক থাকতো। স্বস্তি পাই এই ভেবে যে আমার খেলানো মেয়েদের যথাসময়েই বিয়ে হয়েছে। নাতিনাতনিদের নিয়ে এখন সুখেই আছে। আমি চট্টগ্রাম শহরের সেরা স্কুল কলেজিয়েটে পড়েছি। মাঝে মাঝে গ্রামে বেড়াতে আসতাম। এখানে আমার এক সিনিয়র জ্ঞাতি ভাই ছিলো। বয়সে আমার বড় ছিলেন বলে তাঁকে দাদা ডাকতাম। এই দাদা সব সময় বাহাদুরি করে বলতো তিনি একজন বড় বলি। পশ্চিম বঙ্গের সেরা বলিদেরও তিনি বলি খেলায় হারিয়েছেন। ছেলেরা তাঁর কথা অবাক হয়ে শুনতো। দাদার সাথে বলি খেলা খেলতে কেউ সাহস করতো না। একদিন আমি তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে বসলাম। তিনি বললেন, আমি বলি খেলায় এই চুনোপুটি বলির সাথে খেলতে রাজি হলাম। সবাই অবাক হয়ে দেখলো আমি তাঁকে তিনবারই হারালাম। আমার এই দাদা সবাইকে হাসিমুখে বললেন, এই বাচ্চা বলিটির সাথে ইচ্ছে করেই হেরেছি ওকে উৎসাহ দেওয়ার জন্যে। এটা আমার মহত্ত্ব। বড় বলিরা এভাবেই বলি খেলায় তাঁদের মহত্ত্বের পরিচয় দেয়।

আমি ভালো ফুটবল খেলা খেলতে পারতাম। একবার একটি ফাইনাল খেলায় আমি ম্যারাডোনার মতো হাত দিয়ে গোল করায় রেফারি আমাকে শাস্তি হিসেবে দশ মিনিট খেলতে দিলেন না। আমি রেফারিকে বললাম, ম্যারাডোনারটা তো ঈশ্বরের হাত ছিলো। রেফারি আমাকে বললেন, তোমারটা হলো শয়তানের হাত।

অনেক বিচিত্র খেলাই রয়েছে। তবে সবচেয়ে মজার খেলা হলো রাজনীতির খেলা। বুঝতে পারি সবকিছুই বিধাতার লীলাখেলা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাশেদ রউফ – এর অন্ত্যমিল
পরবর্তী নিবন্ধডানা এবং প্রার্থনা