অর্থনীতিরও উদ্দীপক প্রয়োজন

মহিউদ্দিন বাবর | রবিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বছরের পর বছর ধরে, দেশে কিছু ব্যাংকের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রচুর প্রতিবাদ হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পুঁজি বিদেশে পাচারসহ জনগণের আমানত নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগের পাশাপাশি প্রমাণিত প্রতিবেদনও রয়েছে। ঋণ খেলাপিরা এতটাই শক্তিশালী যে তারা এখন ব্যাংকিং খাতের বিশেষ করে পরিচালক এবং শীর্ষ ব্যবস্থাপনার প্রায় অবিচ্ছেদ্য অংশ। খেলাপিদের দিকে প্রায়শই আঙ্গুল তোলা হয় কিন্তু যারাএর পেছনে রয়েছে তারা পার পেয়ে যায়, তাদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান করা উচিত। তারা হল ঋণের হাঙ্গর, আমানতকারীদের অর্থকে গোগ্রাসে গিলে খাওয়ার মনোভাব নিয়েতারা ছুটছে। ফলে ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

এমন নাও হতে পারে যে সব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ ধরনের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়েছে কিন্তু একটি পচা মাছ পুকুরের অন্যদের নষ্ট করে দিতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, দেশের ব্যাংকিং খাত যা ৮০ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করে, তা মারাত্মক সংকটে রয়েছে। বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছুদিন ধরেই এই অসঙ্গতির বিরুদ্ধে জোরে সোরে রব তুলেছেন কিন্তু বিচক্ষণ পদক্ষেপ ছিল অনুপস্থিত। অবিবেচিতব্যয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব দেশের অর্থনীতিকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলেছে। যদিও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোএই সংকট থেকে মুক্তির জন্য আর্থিক সাহায্য প্রসারিত করতে পারে কিন্তু মনে রাখতে হবে এগুলো সবই স্বল্পমেয়াদী সমাধান।আমানতকারীদের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতেনিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কে অবশ্যই সাহসী এবং সময়োপযুগী পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই খাতের অস্বাভাবিকতা বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করছে কারণ তারা ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে অর্থ স্থানান্তর করে থাকেন। অস্বাভাবিকতা বৃদ্ধির সাথে সাথে, অনানুষ্ঠানিক অর্থ স্থানান্তরখাত, যা হুন্ডি নামে বেশি পরিচিত, খুব সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি সুবিধাভোগীদের জন্য একটি অনিরাপদ চ্যানেল এবং সরকারও লেনদেন থেকে তার প্রাপ্য লভ্যাংশ হারায়।

দেশের মোবাইল ফিন্যান্সিয়্যাল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারীদের ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্স আনার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকেরএকটি সামপ্রতিক সিদ্ধান্ত একটি সময় উপযোগী পদক্ষেপ। তদনুসারে, এমএফএস প্রদানকারীরা তাদের অপারেশনাল ডোমেইনের মাধ্যমে রেমিট্যান্সকে সঠিক পথে দেশে আনতে পারে।

বিদেশ থেকে আসা বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতি ও উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের পরেই এর অবস্থান। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের বার্ষিক রেমিট্যান্স এর পরিমাণ ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি, যা দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডের চাবিকাঠি। গ্রামীণএলাকায় স্থানীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নকে সক্ষম করার পাশাপাশি, দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স ক্ষুদ্র শিল্প এবং অন্যান্য আয়বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম তৈরিতে সহায়তা করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের রেমিট্যান্স আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং টেকসই উন্নয়নের সুযোগসৃষ্টিতে সহায়তা করছে। কোনভাবেই তাদের এই মূল্য সংযোজন সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়এবং বেশ বাস্তবসম্মতভাবে, এমএফএস মোবাইল ফোন অপারেটরদের সাথে তার প্রযুক্তিগত মিত্রতার মাধ্যমে মোডাস অপারেন্ডির ভূমিকা পালন করছে,

প্রকৃতপক্ষে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়্যাল সার্ভিসেস (এমএফএস) দেশের আর্থিক সক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিতে উদ্দীপকের ভূমিকা পালন করছে। মহামারী চলাকালীন এর অনন্য জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা এবং এর বর্তমান লেনদেন দৈনিক ৩০০০ কোটি টাকা, এই সেবাকে একটি নির্ভরযোগ্য ব্যাংকিং টুলে পরিণত করেছে। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা এই খাতটি ইতিমধ্যেই আর্থিক লেনদেনের দক্ষতা এবং ঝুঁকিব্যবস্থাপনায় তার সামর্থের প্রমাণ দিয়েছে। আরও সহায়ক উদ্যোগের মাধ্যমে এই সেবা আমাদের টেকসই উন্নয়ন এর গতি বজায় রাখার জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাষা সংগ্রামের একটি কবিতা ও ইতিহাসের প্রেস
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতারণা মামলায় প্রাইম ডিস্ট্রিবিউশনের এমডি মামুন গ্রেপ্তার