অক্সিজেন প্লান্টের জন্য সরকারি সহায়তা চাই

মোহাম্মদ আলমাস শিমুল

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৬ মে, ২০২১ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বলেন, করোনাকালে দেশের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের যে সংকট তৈরি হয়েছিল, ইস্পাত শিল্পের উদ্যোক্তাদের যদি নিজস্ব অক্সিজেন প্লান্ট না থাকতো তাহলে এ সংকট মোকাবেলা করা দুরূহ হয়ে যেতো। কোভিড শুরুর পর থেকে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা অক্সিজেন সহায়তায় এগিয়ে আসার কারণে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। এজন্য সামনের দিনগুলোতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা প্রদানের পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী ২০২১-২২ সালের বাজেটে এর প্রতিফলন জরুরি।
তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের শুরুতে সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামে অক্সিজেনের সংকট ছিল। প্রথম থেকেই আমাদের প্লান্ট থেকে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলার প্রত্যেকটি হাসপাতালে বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছি। আমরা খালি সিলিন্ডারগুলো নিয়ে এসে পুনরায় রিফিল করে হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের অক্সিজেন প্লান্টটির দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ৩০০ মেট্রিক টন। কিন্তু বর্তমানে হাসপাতালগুলোর জন্য আমরা ৩০-৪০ টন অক্সিজেন লিকুইড করতে পারছি। সক্ষমতা থাকলেও অবশিষ্ট অক্সিজেন আমরা লিকুইড করতে পারি না। সরকার যদি এক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করে, অবশিষ্ট ২৬০-২৭০ মেট্রিক টন অক্সিজেনও যদি লিকুইড করার সুযোগ তৈরি হয়, তাহলে সামনের দিনগুলোতে চট্টগ্রামে অক্সিজেনের সমস্যা যতই প্রকট হোক না কেন, আমরা সেটা মোকাবেলা করতে পারবো। তাছাড়া অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর ক্ষেত্রে পরিবেশ, বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ একাধিক দপ্তরের নানান প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। করোনা সংকটকালীন এসব বাঁধা দূর করা উচিত। সমস্ত আইনকানুন মানুষের জন্য। আগে প্রয়োজন মানুষের জীবন রক্ষা করা। মানুষ বাঁচলে আইন কানুন থাকবে। মানুুষের জীবন রক্ষার্থে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ সহজীকরণ করা উচিত। এজন্য মন্ত্রণালয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে এক স্থান থেকে সব সেবা দেওয়া হোক।
বেসরকারি এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, বাংলাদেশ শুধু আমদানিই করে আসছে। চীন একটি প্রযুক্তিনির্ভর দেশ। চীন থেকে বিশ্বের প্রায় সবাই আমদানি করে। কিন্তু আমাদের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মানে সন্তুষ্ট হয়ে চীন আমাদের কাছ থেকে পণ্য আমদানি করছে। চীনে আমাদের কারখানা থেকে বিলেট রপ্তানি করেছি। সরকার ইতোমধ্যে এ ধরণের রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। আশা করছি, সরকার আমাদের প্রাপ্য প্রণোদনা প্রদান করবে। তাছাড়া আমরা যারা বিলেট রপ্তানি করছি, তাদের জন্য বাজেটে ডিউটি ড্র বেক থেকে শুরু করে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া হয়, তাহলে শুধু আমরাই বছরে হাজার কোটি টাকার বিলেট রপ্তানি করতে পারবো।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ইস্পাত শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল, স্পেয়ার পার্টস, কেমিক্যাল আমদানিতে বিশাল অংকের শুল্ক রয়েছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সেই শুল্কগুলো কমানো উচিৎ। কারণ শুল্ক কমানো না গেলে, উৎপাদিত লৌহজাত পণ্যের মূল্য কমানো সম্ভব হচ্ছে না। শুল্ক কমানো গেলে কম খরচে পণ্য উৎপাদন করতে পারবো। পাশাপাশি আমরা যারা বড় আকারে রপ্তানি করছি, তাদের জন্য বন্দর সুবিধা স্পেশাল করতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলে রপ্তানির সম্প্রসারণ ঘটবে।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের শিল্প কারখানাগুলোতে পানির চরম সংকট রয়েছে। বিশেষ করে সীতাকুণ্ড মীরসরাই এলাকায় যেসব শিল্প স্থাপনা হয়েছে, সেখানে পানির অভাবে আমরা ঠিকমতো মিল কারখানা চালাতে পারছি না। এতে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য আগামী বাজেটে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটারের জন্য একটি বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। জাপান, ভিয়েতনাম, কোরিয়াসহ পৃথিবীর উন্নয়ন দেশগুলোতে ইউটিলিটি সার্ভিস হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার সরকার সরবরাহ দিয়ে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার প্রাপ্তির পদক্ষেপ নেয়া হলে আমরা ২৪ ঘণ্টা মিল চালাতে পারবো। এতে উৎপাদন ব্যয় কমে আসবে, কম দামে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর কমালে ভোক্তারাই লাভবান হবে
পরবর্তী নিবন্ধনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিফান্ড ফেরতের পদক্ষেপ নিতে হবে