হাসিনার নথি চাওয়ার পরই কেন সচিবালয়ে আগুন, প্রশ্ন রিজভীর

| শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিশেষ অগ্রাধিকারের আট প্রকল্পে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক নথি চাওয়ার পরই সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, গতকালই (বুধবার) আমরা সংবাদপত্রে দেখেছি যে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি চাওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এই নথি চাওয়ার পরেই গভীর রাতে (সচিবালয়ে) এই আগুন। এটা জনগণের মধ্যে বিরাট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে দিয়ে আগুনের ঘটনা তদন্তের দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, কারণ গতকাল (বুধবার)

শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের কিছু নথি চাওয়ার পর সচিবালয়ে অনেক নথি পুড়ে যাওয়া এবং সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মধ্য রাতের যে আগুনকোনো মুখরোচক কথা বলতে চাই না। এই আগুনে অনেক নথিপত্র পুড়ে গেল।

রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের এক দিন আগে শেখ হাসিনার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নথি চাওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনাকে সন্দেহ তৈরি করে। চারিদিকের বিভিন্ন ঘটনায় আমরা শঙ্কিত, আমরা ভয়ার্ত। ব্যক্তিগত ভয়ের কিছু নয়, রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের ভয়। আমরা এর আগে দেখেছি, যখন কোনো সচিব বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ আসে, তখনই সচিবালয়ে ফাইল গায়েব হয়ে যায়, সচিবালয়ের ভেতরে আগুন ধরে।

কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা : আলোচনা সভায় রিজভীর অভিযোগ করেছেন, গোয়েন্দারা একটি রাজকীয় দল গঠনের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, আপনারা কোন পথে যেতে চান। আমরা শুনছি যে, একটা রাজকীয় দল করার নাকি চেষ্টা করা হচ্ছে, ‘কিংস পার্টি’ যেটাকে বলা হয়। তো একই তো। মইনুদ্দিনফখরুদ্দিনরা যে চেষ্টা করেছেন, শেখ হাসিনা গোয়েন্দাদেরকে দিয়ে যে কাজ করেছেনএখনও তো আমরা সেটা শুনছি। যে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষজনকে বলছে যে, অমুক অমুক লোকের সঙ্গে আপনারা যোগাযোগ করুন। এটা তো করতে পারে না। এটা হলে তো মানুষের যে এত আত্মদান, সেটা তো করত না। এই পরিস্থিতি যদি আবার ফিরে আসে যে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কারা কারা নির্বাচিত হবেন, কারা কোন রাজনৈতিক দল করবেন এটা নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আর কী সার্থকতা থাকল?

রিজভীর অভিযোগ, শেখ হাসিনাও একই কাজ করেছেন। উনি তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তিনি বিরোধীদলের লোকজনকে ধমক দিতেন, চেষ্টা করাতেন বিএনপি থেকে যেন তাদেরকে যেন সরিয়ে দেওয়া যায়, তারা যেন আরেকটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে, তারা যেন বিএনপিকে ভাঙে। এই কাজটাই তো ১৬/১৭ বছর শেখ হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে করেছেন। এখন আবার আমরা শুনছি, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা নাকি একটি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য, কাউকে কাউকে সমর্থন দেওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে। এই ঘটনা কিন্তু এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, যে মানুষ যে রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করে তাকে তারা ভোট দেবে, যে মানুষ যে রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায় তারা সেভাবে রাজনৈতিক দল গঠন করবে, এখানে কোনো নির্দেশনা, কোনো হুমকি, রাষ্ট্রের কোনো খবরদারি থাকবে নাৃএটাই হচ্ছে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ, এটাই প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সেটা না করে মইনুদ্দিনফখরুদ্দিনের মত, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মত এবং শেখ হাসিনার মত একই কালচার, একই সংস্কৃতি যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে তো মানুষ মনে করবে আরেকটি ফ্যাসিবাদ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে, এটা হতে দেওয়া যেতে পারে না।

রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের’ এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্বাচিত সংসদ সংস্কার বাস্তবায়ন করবে : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধসচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে সরকার বিব্রত হওয়া অস্বাভাবিক নয় : ফখরুল