স্বজনের হাতে কেন এত খুন

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ

স্বজনের হাতে খুন হচ্ছে প্রিয়জন। স্বামীর ওপর অভিমান করে স্ত্রী হচ্ছেন আত্মঘাতী। দাম্পত্য কলহের জের ধরে প্রিয় সন্তানকে খুন করছে মা কিংবা বাবা। আবার দারিদ্র্যের অজুহাতে নবজাতক বিক্রি হয়ে যাচ্ছে অনায়াসেই। চলতি মাসেই এ ধরনের অন্তত ৭টি ঘটনা ঘটেছে। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাওয়াই এর মূল কারণ।
বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন আজাদীকে বলেন, মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং হতাশার কারণে পারিবারিক কলহ-বিরোধ বাড়ছে। তরুণদের সামনে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক আদর্শ নেই। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এগুলো সংস্কারে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনও সুদৃঢ় করতে হবে। বিকৃত মানসিকতা, মানসিক বিষণ্নতা, আত্মকেন্দ্রিকতার কারণে প্রিয়জন হচ্ছে অপরাধী। গত ১৯ অক্টোবর সাতকানিয়ায় বিষ খাইয়ে ছেলেকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন প্রবাসী বাবা। নিহতরা হলেন বাবা নুরুল কবির (৩৮) ও ছেলে মো. সানি (৯)। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া এজাহার ডাক্তারের বাড়ির পুকুর পাড় থেকে ছেলের লাশ ও বাবাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে বাবা মারা যায়। এর আগে ১৫ অক্টোবর সকাল সোয়া ৯টার দিকে পাঁচলাইশ থানার মোহাম্মদপুর এলাকার ইসমাইল কলোনির এস এস হাউজ নামে একটি ভবনের চারতলার একটি বাসা থেকে মা ও দুই সন্তানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত সুমিতা খাতুনের স্বামী সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাঁচলাইশ থানার ওসি জাহিদুল কবীর ও সুমিতার স্বজনদের দাবি স্বামীর পরকীয়ায় অভিমান করে সুমিতা আত্মঘাতী হয়েছে এবং তার আগে দুই সন্তানকে খুন করেছে। তার আগের দিন ১৪ অক্টোবর মীরসরাই জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকার একই পরিবারের তিনজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সম্পত্তি না দেওয়ায় পরিবারের বড় ছেলে ছাদেক হোসেন (৩০) নিজ বাবা-মা ও ভাইকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ ছোট ভাই আলতাফ হোসেনের। জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর হোসেন মামুন বলেন, পারিবারিক কলহ ও সম্পত্তির বিরোধের কারণে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে।
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে ছয় মাসের শিশু সন্তানকে বিক্রি করে দেয় আব্বাস মিয়া (২২) নামে এক ব্যক্তি। অভিযোগ পেয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশ দোহাজারী থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে এবং অভিযুক্ত আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে। চান্দগাঁও থানার ওসি মো. মঈনুর রহমান বলেন, আব্বাস ও তার স্ত্রীর মধ্যে কয়েক দিন ধরে ঝগড়া চলছিল। মঙ্গলবার সকালে আব্বাস তার স্ত্রীর অজান্তে ছয় মাস বয়সী শিশু সন্তানকে দোহাজারী এলাকায় এক দম্পতির কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।
এদিকে স্ত্রীকে ঘরে তালাবন্দী রেখে নিজের দুই মাসের শিশু সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে স্বামী আরাফাতুল ইসলাম মোর্শেদের বিরুদ্ধে স্ত্রী নুরজাহান আক্তার কলি গত ১১ অক্টোবর দুপুরে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে মামলা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সন্তানকে হত্যা চেষ্টার পাশাপাশি স্ত্রীকে এর আগেও সন্তানসহ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া এবং গায়ে গরম ভাতের মাড় ফেলে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে স্বামীর বিরুদ্ধে। মামলায় নির্যাতিতা ওই নারীর শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর ও খালা শাশুড়িকে আসামি করা হয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর টাকার বিনিময়ে নবজাতককে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে নানিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। ওসি জাহিদুল কবীর আজাদীকে জানান, নবজাতক গর্ভে থাকাবস্থায় টাকার বিনিময়ে নবজাতককে পাচারের পরিকল্পনা করেন নানি। পরিকল্পনা অনুযায়ী নবজাতকের নানি রাবেয়া খাতুন বিভিন্ন সময়ে হারুন ও মনোয়ারা বেগম থেকে ৫৭ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। রাবেয়া পরিকল্পনা করে মেয়েকে ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুরের কোনো এক সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নাতিকে হারুন ও মনোয়ারার কাছে হস্তান্তর করেন। বুধবার হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার দিন বয়সী শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
গত ৩ অক্টোবর রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় স্ত্রীকে হত্যার দেড় মাস পর মো. জাহাঙ্গীরকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুর রহমান জানান, প্রথমে মারধর এবং পরে শ্বাসরোধ করে স্ত্রী রোকসানাকে হত্যা করে বাসায় তালা দিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যান স্বামী মো. জাহাঙ্গীর। দেড় মাস পর তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পিতাকে মারধর করায় মাদকাসক্ত ছেলে মো. শাখাওয়াত শাহরিয়ার চৌধুরীকে (২৭) গ্রেপ্তার করেছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। থানার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন কাপাসগোলা রোডের আকবরশাহ্‌ লেইনের বাসায় গত ১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জাফরুল আলম চৌধুরী বাথরুমে অজু করার সময় বড় ছেলে মো. শাখাওয়াত শাহরিয়ার চৌধুরী মাদক সেবনের জন্য টাকা চায়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে বাথরুমে ফেলে দেয়। এক পর্যায়ে চেয়ার দিয়ে আঘাত করলে মাথা ফেটে যায়। আহত অবস্থায় চিৎকার শুনে ছেলের মা ছুটে এলে তাকেও প্রাণনাশের হুমকি দেয় সন্তান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমপ্রীতি বজায় রাখতে শিশুদের সংস্কৃতিচর্চা অপরিহার্য : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা