রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোই মূল কাজ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

করোনা প্রতিরোধে দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকাদান গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে। গত পাঁচ দিনে চট্টগ্রামে ৩৫ হাজার ৯৯৪ জন ব্যক্তি টিকা নিয়েছেন। টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। বিশেষজ্ঞরাও ভিন্ন ভিন্ন মত দিচ্ছেন। তারা বলছেন, টিকা নিয়ে এখনো গবেষণা শেষ হয়নি। সময় গড়ানোর সাথে সাথে নতুন নতুন তথ্য উঠে আসবে-এটাই স্বাভাবিক। তারা বলছেন, সাধারণত দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পর থেকে অ্যান্টিবডি ডেভেলপ করবে। মতভেদে এটি ৬ মাস থেকে শুরু করে ছয় বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। তবে তা এখনো পরিষ্কার করে বলা যাবে না। তাই টিকা গ্রহণ করলেও আগের মতো শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন পর্যন্ত মার্কিন বহুজাতিক অষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক, মার্কিন জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মডার্না এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। দেশে ৪ জানুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনতে সাত শর্তে বেক্সিমকো ফার্মসিউটিক্যালস লিমিটেডকে অনাপত্তিসূচক সনদ বা এনওসি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। করোনা টিকার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আব্দুস সাত্তার দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত যে ভ্যাকসিনটি দেয়া হচ্ছে সেটি প্রথম ডোজ দেয়ার পর ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত বিরতি নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এতে ভ্যাকসিনটি ভালো সুরক্ষা দেবে, এমনটি আমরা জানতে পেরেছি। ভ্যাকসিনের মূল কাজটাই হচ্ছে অ্যান্টিবডি তৈরি করা। সোজা বাংলায় বললে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। যাদের একবার কোভিড হয়ে গেছে কিংবা হয়নি তাদের সবার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন ৫-৬ মাস পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। তবে ভ্যাকসিন নিয়ে এখনই পরিষ্কার করে কিছু বলা যাবে না। এখনো এটি নিয়ে গবেষণা চলছে। দুই ডোজ দেয়ার পর দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দেবে কিনা সেটি বলার সময় এখনো আসেনি। নাকি প্রতি বছরই দিতে হবে, এটিও আমরা এখন বলতে পারছি না। তবে এটুকু বলা যায়, ভ্যাকসিন দেয়া শেষ মানেই নিরাপদ নয়। ভ্যাকসিন দেয়ার পরও আগের স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ভ্যাকসিনের জন্য মানুষের মধ্যে ভালোই আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ভ্যাকসিন দেয়ার কেন্দ্রগুলোতে এর চিত্র ফুটে উঠছে। তবে ভ্যাকসিন নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। আমাদের দেশে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি দেয়া হচ্ছে। সাধারণত দ্বিতীয় ডোজ থেকে ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি ডেভেলপ করবে। এটি নয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে। তবে ভিন্নমতও রয়েছে। ভ্যাকসিনই শেষ কথা নয়, আমাদের আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জীবন-যাপন করতে হবে। আমাদের দেশে কোভিড নিয়ে ভীতি দূর হওয়ার সাথে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার একটা প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, কোভিড এখনো দেশ থেকে চলে যায়নি। ভাইরাসের তীব্রতা কমতে পারে। তাই ভ্যাকসিন দেয়ার পরেও স্যানিটাইজার এবং মাস্ক ব্যবহার অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব পারস্পরিক দূরত্বও বজায় রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী বলেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি তৈরি হতে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই সময়ের মধ্যে কেউ আবার করোনায় আক্রান্ত হবেন না, সেটি বলা যাবে না। অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার পর কতদিন পর্যন্ত থাকবে সেটিও বলা মুশকিল। তাই ভ্যাকসিন দিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।
চমেক হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগের প্রধান এবং সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারহানা আকতার বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার দুটি ডোজ নিতে হয় ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের ব্যবধানে। এ টিকা দেয়ার কার্যকারিতা ৬৩ শতাংশ বলা হয়েছে। টিকা নেয়ার ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু হয়। টিকার দ্বিতীয় ডোজ এই অ্যান্টিবডির স্থায়িত্ব বাড়ায়। তবে এ টিকার সুরক্ষা কতদিন থাকবে তা এখনো অনিশ্চিত। টিকা প্রদানের পরবর্তী ট্রায়ালে এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে আশা করি। তবে এ টিকা করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে না, কিন্তু এর ভয়াবহতা, মৃতুঝুঁকি ও হাসপাতালে ভর্তির মাত্রা কমিয়ে আনবে। তাই টিকা নিলেও মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম পূর্বের মতোই মেনে চলতে হবে।
তিনি বলেন, টিকা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য আসছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি অক্সফোর্ডের আরেকটি তথ্য প্রকাশিত হয়, এতে দেখা গেছে, যারা ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দুটো টিকা নিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা ৮২ দশমিক ৪ শতাংশ। করোনা রোগটি পৃথিবীতে সম্পূর্ণ নতুন একটি রোগ। এর ভ্যাকসিনের অনেক কিছুই এখনো আমাদের অজানা। তাই এ টিকা নিয়ে যে ট্রায়ালগুলো চলছে, সেগুলোর ফলাফল না আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছয় পৌরসভায় ভোট কাল
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র শবে মেরাজ ১১ মার্চ