মশার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স

নতুন কৌশল উদ্ভাবন ও বিকল্প কিছু সন্ধানের পরামর্শ মেয়রের সতর্ক করলেন পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নানা উদ্যোগ ও চেষ্টার পরও নগরে কমছে না মশার উৎপাত। বিরক্তিকর কিউলেক্স মশা তো আছেই, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত নগরবাসী। প্রায় প্রতিদিন শনাক্ত হচ্ছে নতুন ডেঙ্গু রোগী। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার তথ্য নিয়ে গতকাল রোববার প্রকাশিত সিভিল সার্জনের প্রতিবেদনেও নতুন ৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের তথ্য রয়েছে। মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ক্ষোভ আছে নগরবাসীর।

এ অবস্থায় গতকাল দুপুরে জরুরি সভা ডেকে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকর্মচারীদের সতর্ক করলেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। কাজে গাফেলতি করে এমন স্প্রে ম্যানদের তালিকা চান তিনি। বলেন, যে কোনো উপায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নির্দেশ দেন নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবনের। নতুন ওষুধের সন্ধানের পাশাপাশি কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে লার্ভা খেতে পারে এমন মাছ বা কীটপতঙ্গ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতায় জোর দেন। শাহাদাত বলেন, মশার কীটনাশকে যাতে কোনোভাবেই ঘাটতি না পড়ে। বর্তমানে মশা নিয়ন্ত্রণে যেসব ওষুধ ব্যবহার করছে তার মান যদি ভালো না হয় তাহলে নতুন ওষুধের সন্ধান করুন। আমরা সেনা কল্যাণ সংস্থার কাছ থেকে মেডিসিন কিনছি। নৌবাহিনীরও মশা নিয়ন্ত্রণে একটি ওষুধ আছে। আরো কোনো কোম্পানি যদি ভালো ওষুধের সন্ধান দিতে পারে সেগুলো আমরা সংগ্রহ করব। এ ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করতে চাই না। মশা নিয়ন্ত্রণে কিছু বিকল্পের কথা ভাবছি আমরা। মশার লার্ভা খেয়ে ফেলে এমন মাছ ও কীটপতঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, মশার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স অবস্থান। মশার ব্যাপারে যেভাবে হোক আমাদেরকে একটা জায়গায় আসতে হবে। জনগণ যাতে উপকৃত হয়। জনগণ যাতে মশার কামড় খেয়ে হসপিটালে আসতে না হয় কিংবা মৃত্যুবরণ না করে কিংবা তারা কোনো ডিস্টার্ব ফিল না করে। ওয়ার্ড সুপারভাইজারদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, যে সমস্ত পরিচ্ছন্নকর্মী মশার স্প্রে করার ক্ষেত্রে গাফেলতি করছে তাদের নামগুলো আমাকে দেন। তাদেরকে অবশ্যই পানিশমেন্টের আওতায় আনব। যারা সুপারভাইজার আছেন আপনাদেরকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, কেউ ফাঁকিবাজি করলে এটার দায়দায়িত্ব আপনাদেরকে নিতে হবে। যদি আপনারা লুকাতে চান আমরা আল্টিমেটলি খবর পেয়ে যাব। প্রতিটি এলাকায় আমাদের লোকজন আছে। কাজেই আপনাদেরকে আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আপনারা কেউ গাফেলতি করলে, কেউ ফাঁকিবাজি করলে, কেউ কাজ না করলে লুকানোর চেষ্টা করবেন না। এটা আমাদেরকে ইনফর্ম করেন। আমরা দরকার হলে নতুন লোক দিয়ে কাজ করাব। আমি চাই কাজ হোক। কাজ হতে হবে, না হয় জনগণ দুর্ভোগে পড়বে। জনগণ দুর্ভোগে পড়লে আল্টিমেটলি গিয়ে এটার দায়দায়িত্ব আমাদেরকে নিতেই হবে।

জনসচেতনতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জনসচেতনতা বৃদ্ধি করবেন। আমিও চেষ্টা করছি। বিভিন্ন জায়গায় নালা, ঝোপঝাড় এগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ডেঙ্গুর ব্যাপারে আমরা লিফলেট বিতরণ করছি। এটা আরো বাড়াতে হবে। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা জিরোতে নিয়ে আসতে হবে। জণসচেতনতা যদি বৃদ্ধি করতে না পারি তাহলে জনগণের কোনো উপকারে আসতে পারব না। এই ডেঙ্গু মশার জন্য আমরা বারবার বলছি, যেকোনো জায়গায় ডাবের খোসা, কোনো বালতি বা কোনো নির্মাণ সামগ্রী যাতে উন্মুক্ত না রাখা হয়। কারণ সেখানে যদি পানি জমা থাকে তাহলে সেই পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিবে। বাসায় দুইতিন দিনের জন্য বালতিতে পানি জমিয়ে রাখবেন না। টবের মধ্যে পানি জমিয়ে রাখবেন না এবং খোলা জায়গায় টব রেখে সেখানে পানি জমা করবেন না।

সভায় চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম মাহি জানান, মশা নিয়ন্ত্রণে ৯১ জনের একটি বিশেষ টিম গঠন করে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে। ৪১টি ওয়ার্ডে মশা নিয়ন্ত্রণের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বড় ওয়ার্ডগুলোতে ৫৬ জন এবং ছোট ওয়ার্ডগুলোতে ৪ জন রুটিন ওয়ার্কের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা ও উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাতের অন্ধকারে সিমেন্ট খালাস নিয়ে হাতাহাতি, ফিশিং বোট জব্দ
পরবর্তী নিবন্ধস্বৈরশাসকদের অধ্যায় জেলেই শেষ হয় : প্রেস সচিব