বস্তায় আদা চাষে সাফল্য

পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | সোমবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে অনাবদী জমিতে বস্তায় আদাচাষ করে সাফল্য পেয়েছেন নাজমা সুলতানা নামে এক নারী কৃষি উদ্যোক্তা। উপজেলার পূর্ব তিনটহরী এলাকায় তিন একরের একটি পারিবারিক মিশ্র ফল বাগানে কলা ও মাল্টা চাষের সাথী ফসল হিসেবে প্রায় ৫ হাজার ৩০ বস্তায় আদার আবাদ করেন তিনি। ইতোমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে তা সাড়া ফেলেছে অন্য কৃষকদের মাঝেও। কারণ প্রচলিত চাষের বিকল্প হিসেবে বস্তায় চাষে মাটি ক্ষয় ও পোকা মাকড় আক্রমণের ঝুঁকিও কম।

ফোর সিজন এগ্রো ফার্মে সত্ত্বাধিকারী নাজমা সুলতানা বলেন, এটা আমাদের পারিবারিক বাগান। এখানে মাল্টা, কলা, সজনে, নিম গাছ লাগিয়েছে। এরপর প্রচুর ছায়াযুক্ত জায়গা পরে আছে। সাথী ফসল হিসেবে কিছু একটা চাষাবাদের পরিকল্পনা ছিল। ফার্মের কাজ পরিচালনা ও রক্ষণাবক্ষেণে দুজন স্টাফ রয়েছে। প্রতি বছর তাদের বেতন ভাতা বাবদ যায় তিন লাখ টাকা। ফার্মের আয় থেকে তাদের বেতন ভাতা পরিশোধের উপায় খুঁজছিলাম। একদিন বস্তায় আদা চাষ বিষয়ে ইউটিউবে একটি প্রতিবেদন দেখে এবং বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশিকুল ইসলামের বস্তায় আদা চাষ বিষয়ে বক্তব্য শুনে আমি অনুপ্রাণিত হই। চলতি বছরের মে মাসে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছি। ফেব্রুয়ারিতে আদা সংগ্রহ করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটা বস্তায় আদা তুলে দেখেছি ফলন খুবই ভালো। অন্তত ১০ টন আদা উৎপাদিত হবে। বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।

মানিকছড়ি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার নাথ বলেন, এখানে প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে বস্তায় আদা চাষ করেছে। যেকোন রোগ বা পোকা মাকড় আক্রান্ত হলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়। এখন এলাকার অনেক কৃষক বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। বস্তায় আদা চাষ পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পরবে।

তিনি বলেন, মাটিতে মসলা জাতীয় আদা চাষ করলে ভূমি ক্ষয় ও নানা ধরনের রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি থাকে। জমিতে আদা চাষে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি কন্দপঁচা রোগ। টানা ১০ থেকে ১৫ দিনের বৃষ্টিতে হলে এই রোগের সংক্রমণ হয়। কিন্ত বস্তায় আদা চাষে সেই ঝুঁকি নেই। যতই বৃষ্টি হোক বস্তায় পানি বেশিক্ষণ জমে থাকে না। আর যেহেতু প্রতিটি বস্তা আলাদা আলাদা তাই কন্দ পঁচা রোগ সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ নেই।

মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৭০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হচ্ছে। এখন পাহাড়ে ঢালু অংশ যেভাবে আদা চাষ হচ্ছে তাতে ভূমি ক্ষয়ের শঙ্কা রয়েছে। ভূমি ক্ষয় রোধে পরিবেশসম্মত উপায়ে বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। উপজেলার ৪ হাজার ২৬৮ হেক্টর ফল বাগানে সাথী ফসল হিসেবে আদা চাষ করা যাবে। আদা সাধারণ ছায়াযুক্ত স্থানে চাষাবাদ করা যায়। এত বাড়তি আয় হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বাৎসরিক আদার চাহিদা ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টনের মধ্যে উৎপাদিত হয় দুই থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন আদা উৎপাদিত হয়। বাকি আদা বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। বস্তায় আদা চাষ বাড়লে উৎপাদন বৃৃদ্ধি পাবে এবং আমদানি বাবদ অর্থ সাশ্রয় হবে। খাগড়াছড়িতে চলতি মৌসুমে আদা চাষ হয়েছে ২ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ৬০২ মেট্টিক টন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট বাড়াচ্ছে বিমান
পরবর্তী নিবন্ধনভেম্বরে রেমিটেন্স এলো ১৯৩ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ২১%