জলের সাথে খেলা, আর পাখিদের মিলনমেলা দেখতে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত মহামায়া লেক। এবারের ঈদুল আযহার ছুটিতে মহামায়া ইকোপার্কে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদের পর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যটকের পদচারণায় মুখর এই প্রাকৃতিক নৈসর্গিক লেক আর বনভূমি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ছুটির দিনে সব বয়সী দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে আছে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ নৌকায় করে লেকে ঘুরছেন। আবার কেউ কেউ কায়াকিং করছেন। পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ইকবাল হোসেন মাহিন (৩২) নামে একজন বলেন, ছুটির দিনে এখানে ঘুরতে আসি। আগেও কয়েকবার এসেছি। খুব ভালো লাগছে। বাচ্চারাও ভালো সময় কাটাচ্ছে।
এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে উন্নত মানের হোটেল, থাকার জন্য রয়েছে থ্রি–স্টার মানের মহামায়া রিসোর্ট। চট্টগ্রাম শহর থেকে ঘুরতে আসা ৮ বন্ধুর একজন সাদমান ইসলাম বলেন, মহামায়া আমাদের খুব পছন্দের জায়গা। আমরা বছরে কয়েকবার এখানে বেড়াতে আসি। লেকের স্বচ্ছ পানিতে গোসল করেছি। খুব ভালো লাগছে। ঠাকুরদিঘী–মহামায়া রুটে সিএনজি টেক্সি চালক নুরুল আবছার বলেন, পর্যটক বাড়াতে আমাদেরও অনেক আয় হচ্ছে। টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ হানিফ বলেন, অনেক পর্যটক আসছেন। আশা করছি আরও পর্যটকের সমাগম থাকবে।
মহামায়া বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের ইজারাদার মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন বলেন, মহামায়া খুবই সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র। এখানে একই স্থানে রয়েছে লেক, পাহাড়, ঝরনা ও রাবার ড্যাম। পাহাড়ের কোলে লেকটির আঁকাবাঁকা অবয়ব অপরূপ সুন্দর। ছোট–বড় অসংখ্য পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই লেক। লেকের অন্যতম আকর্ষণ পাহাড়ি ঝরনা ও স্বচ্ছ পানি। মহামায়া লেকের নীল জলরাশিতে কায়াকিং করতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন অনেকে। তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা রয়েছে এখানে। থাকা–খাওয়ার জন্য রয়েছে উন্নত মানের রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্ট। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুরো পার্ক সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে।
মহামায়া লেক ও ইকোপার্কটি ২০১০ সালে উদ্বোধন করা হয়। পাউবো কর্তৃক এখানে বাঁধ দেয়ার দরুন সৃষ্ট লেকে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ফুটে উঠে। লেকের পানিতে নৌকা নিয়ে ছুটোছুটি আর বেশ কয়েকটি ঝরনার কলকল ধ্বনি ও মনোরম দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে। এছাড়া পাথরের পথ, দুপাশে পাথরের উঁচু ক্যানেল পেরিয়ে যাওয়া, পানকৌড়ি, অতিথি পাখিসহ হরেক রকম পাখপাখালি, বানর ইত্যাদির দেখা মিলবে এখানে এলে। সরকারিভাবে এখানে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ স্থাপনের প্রস্তাবনা রয়েছে। যার প্রস্তাবনা ও প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় বন বিভাগ।
এই বিষয়ে স্থানীয় মীরসরাই বন রেঞ্জ কর্মকর্তা নওশাদ আলম জানান, ইতোমধ্যে একটি ভালো মানের ক্যান্টিন, একটি প্রাইভেট আবাসিক ব্যবস্থা, শৌচাগার, বসার ব্যবস্থা ও একটি কর্টেজ নির্মাণ করা হয়েছে। আগামীতে ঝুলন্ত সেতুসহ আরো কিছু দর্শনীয় স্থান ব্যবস্থা করার প্রস্তাবনা রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই এসব উন্নয়ন হলে এই মহামায়ার চিত্র আরো পাল্টে যাবে।
কীভাবে আসবেন : দেশের যে কোনো স্থান থেকে গাড়িতে উঠে মীরসরাই উপজেলার ঠাকুরদিঘী নামতে হবে। সেখানে রাস্তার মুখে সিএনজি টেক্সি রয়েছে। একজন ১৫ টাকা ভাড়ায় মহামায়ার মূল গেটে যাওয়া যাবে।