পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ ভারতে আটক থাকা দেশের যেকোনো নাগরিককে ফিরিয়ে আনবে। তবে তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্য যাচাই করা প্রয়োজন। গতকাল রোববার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
ভারতে বাংলাদেশিদের আটকের খবর সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কেবল গণমাধ্যমের খবর সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমাদের সাথে কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়নি। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক বার্তা পাওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বন্দীদের জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সত্যাসত্য যাচাই শুরু করবে। খবর বাসস ও বাংলানিউজের।
তিনি বলেন, ভারতের বাংলাভাষী কিছু লোক বাংলাদেশিদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সতর্কতার সাথে যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈধ ভারতীয় ভিসা নিয়ে ভ্রমণকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের হয়রানির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, সুস্পষ্ট সমঝোতা থাকা উচিত, যারা বৈধ ভিসা নিয়ে ভ্রমণ করছেন, তারা তাদের ভ্রমণ সম্পন্ন করে যথাসময়ে দেশে ফিরে আসবেন। তবে যদি কেউ আইন লঙ্ঘন করে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সংশ্লিষ্ট দেশের অধিকারের মধ্যে পড়ে। উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ এখনো ভারত সম্পর্কে কোনো ভ্রমণ পরামর্শ জারি করেনি। তবে এই মুহূর্তে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে নাগরিকদের ভ্রমণ এড়ানো উচিত।
গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শনিবার আহমেদাবাদ এবং গুজরাটের সুরাটে অভিযানের সময় ১,০২৪ জন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করার দাবি করেছে।
ভারত–পাকিস্তানে কোনো সংঘাত চাই না : ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত–পাকিস্তান দুই দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বিদ্যমান। আমরা চাই আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে তারা চলমান সমস্যার সমাধান করুক।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি চাই। আমরা জানি যে, ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন সংঘাতময় সম্পর্ক চলছে। আমরা চাই না এখানে কোনো সংঘাত সৃষ্টি হোক, যা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়। বাংলাদেশ এই সংকটের সমাধান করতে আগ্রহী কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মধ্যস্থতার প্রস্তাব পেলে ভেবে দেখব, তবে আগ বাড়িয়ে কিছু করতে আগ্রহী নয়।
আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকতে পারব না : দেশের স্বার্থে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সংগঠনটির সঙ্গে যতখানি প্রয়োজন ততখানি যোগাযোগ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটা পরে। এটি তো আমাদের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কারণ মিয়ানমারের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে আছে এবং তাদের আমরা ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছি। ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে যা কিছু প্রয়োজন সেটা তো আমাদের করতে হবে। কারণ আমাদের স্বার্থ সেখানে সংশ্লিষ্ট আছে।
তিনি বলেন, একরা নন–স্টেট অ্যাক্টরের কাছে আমাদের সম্পূর্ণ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে। সীমান্তে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। নিজেদের স্বার্থে কোনো না কোনোভাবে আমরা যোগাযোগ করতে পারি। তবে একটা নন–স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে আমরা অবশ্যই অফিশিয়াল যোগাযোগ করতে পারি না। আমরা চাইলেও একেবারে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারব না, সেক্ষেত্রে যতটুকু প্রয়োজন সেটুকু আমরা নিশ্চয়ই করব।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা দিতে মানবিক করিডোরের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এ বিষয়ে সম্মত। এটা মানবিক সহায়তার চ্যানেল হবে। কিন্তু এটার ব্যাপারে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্তাবলী পালিত হলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি প্রবেশ করে বর্ষবরণ উদযাপন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এটা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে, আমি যতটুকু জানি হোম মিনিস্ট্রি এটা নিয়ে কাজ করছে। এ বিষয়ে আমি বলতে চাই না।