এবারও মুসলিম সমপ্রদায়ের কাছে ঈদ এসেছে ভিন্ন রকম আবহে। ভয়ে আতঙ্কে আছে বিশ্বের প্রায় সব মানুষের সাথে বাংলাদেশের জনগণও। করোনা নামক মহামারি মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। সাধারণত একমাসের রমজান শেষে গোটা দেশের মুসলমানরা মেতে ওঠেন খুশির ঈদে। কিন্তু গতবারের মতো এবারের ঈদুল ফিতরের খুশিও যেন কেড়ে নিয়েছে করোনা ভাইরাস। বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেই এদিন ঈদের খুশি ভাগ করে নেবেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা। উৎসবের সঙ্গে যে হুল্লোড় থাকে, উচ্ছ্বাস থাকে, তা এবারও হবে না, সবই যেন উধাও। ঈদে বাংলাদেশের করোনার সংক্রমণ যাতে বৃদ্ধি না পায়, তারজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে যেখানে আছেন, সেখানে ঈদ করতে। কিন্তু মানুষ তা মানছে না বলে সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। ঈদের বহু আগে থেকে সরকারের পক্ষ থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলে আরো কড়াকড়ি আরোপের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা খুব একটা কার্যকর হয়েছে বলে মনে হয় না। দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও রাজধানী থেকে অনেকেই যে যেভাবে পারছেন গ্রামে ছুটছেন এখনো।
আমরা জানি, ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। এই ঈদুল ফিতর বছরে তো একবারই আসে। বাবার হাত ধরে সন্তান অথবা ভাইয়ের সাথে ভাই, ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়তে যাওয়ার এমন দৃশ্য ছিলো চিরায়ত। কিন্তু করোনা যে সব কিছু পাল্টে দিয়েছে। তাই চিত্র এবারও ভিন্ন রকম। করোনা মহামারির সময় ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে এলো এবারের ঈদ। তাই আনন্দের বদলে বিষাদ মানুষের মাঝে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষাদের মধ্যে আমাদের প্রফুল্ল থাকতে হবে। এই ক্রান্তিতে নিজেকে, নিজের পরিবারকে উৎফুল্ল রাখার মধ্য দিয়ে সামাজিক দায়িত্বও আমাদের পালন করতে হবে। কারণ সংকট মোকাবিলায় মানসিক দৃঢ়তা অনেক বেশি প্রয়োজন। মনোবল শক্ত রেখে সব কাজ করতে হবে।
ঈদ আরবি শব্দ। এটি ‘আওদ’ শব্দমূল থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হল ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা, বার বার আসা। মুসলমানদের জীবনে চান্দ্র বৎসরের নির্দিষ্ট তারিখে প্রতি বছরই দুটি উৎসবের দিন ফিরে আসে। তাই দিন দুটিকে ঈদ বলা হয়। ফিতর শব্দের অর্থ হলো ভেঙে ফেলা, বিদীর্ণ করা। মুসলমানরা রমজানের চাঁদ দেখার সাথে সাথে রোজা রাখা আরম্ভ করে এবং শাওয়ালের চাঁদ দেখার সাথে সাথে রোজা ভেঙে দেয় তথা রোজা রাখা ছেড়ে দেয়। সে কারণে এটিকে ঈদুল ফিতর তথা রোজা ভাঙার আনন্দ বলা হয়।
মুসলমানদের ঈদ উদযাপন করতে হয় তাদের ইতিহাসের আলোকে ও ঐতিহ্যের আলোকে। এই ঈদ হবে ইবাদত, ভোগ-উল্লাস ত্যাগের মাধ্যমে। ঈদের আগমনই ঘটে শান্তির বার্তা নিয়ে আনন্দের বার্তা নিয়ে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমাদের এ আনন্দ উপভোগ ব্যাহত হয়। ঈদ উপলক্ষে আনন্দ দিতে গিয়ে নানা রকম কুরুচিপূর্ণ উপকরণ আমরা প্রত্যক্ষ করি। এসব শুধু আমাদের মনকে কলুষিত করে না; বরং চরিত্র ধ্বংস করে আমাদের যুব সমাজের। তা মোটেই কাম্য নয়। ঈদ অবশ্যই আমাদের আনন্দের উৎসব। তা পালন করা দরকার ভব্যতায়, রুচিশীল পরিবেশে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে আমরা মুসলমানরা সকলেই ইবাদত করবো। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করবো, যেন এই মহামারি থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেন। পবিত্র কোরআন-হাদিসে মানুষকে আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি দোয়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোয়াই ইবাদতের মূল। বর্তমান এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দোয়ার বিকল্প নেই। যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের মহান আল্লাহর দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করলে তিনি অবশ্যই বান্দাকে সাহায্য করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেব।’ (সুরা : আল গাফির, আয়াত : ৬০)। এ কারণে যে কোনো সময় যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো প্রয়োজনে আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করতে পারি। আমাদের সবার প্রত্যাশা- দুঃসময় কাটিয়ে দেশ ও গোটা বিশ্বে শীঘ্রই ফিরবে সুদিন।