নারীদের ক্ষেত্রে যে নিপীড়নকে আইনে ‘ধর্ষণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, পুরুষসহ অন্যদের সঙ্গে একই ধরনের অপরাধ ঘটলে তাকেও ‘ধর্ষণ’ হিসেবে বিবেচনা করতে দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞা কেন সংশোধন করা হবে না, সেই প্রশ্ন রেখেছে হাই কোর্ট। এক আইনজীবীসহ তিনজনের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল রোববার এই রুল জারি করে। খবর বিডিনিউজের।
ধর্ষণ সংক্রান্ত দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় লিঙ্গ সমতা বিধান করে সংশোধন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গাজীপুরের বাসিন্দা সৌমেন ভৌমিক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাসমিয়া নূহিয়া আহমেদ এবং সমাজকর্মী মাসুম বিল্লাহ হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন। আদালতে তাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে যৌন সঙ্গম করলে সেটা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে, যদি নিচের পাঁচটি ঘটনার কোনো একটি ঘটে থাকে।
এক. তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে; দুই. তার সম্মতি ছাড়া; তিন. হত্যা বা আহত করার ভয় দেখিয়ে রাজি করিয়ে; চার. ওই পুরুষ যদি জানেন যে তিনি ওই নারীর স্বামী নন, আর ওই নারী সম্মতি দিয়েছেন কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, ওই পুরুষ তার আইনসম্মতভাবে বিয়ে করা স্বামী; পাঁচ. সম্মতি দেওয়া হোক বা না হোক, ওই নারীর বয়স যদি ১৪ বছরের কম হয়। (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বয়সের এই সীমা দেওয়া আছে ১৬ বছর)
সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ধর্ষণের ক্ষেত্রে যৌন সঙ্গম বিবেচনা করার জন্য ‘পেনিট্রেশনই’ (প্রবিষ্ট করা) যথেষ্ট হবে।
আইনজীবী তাপস কান্তি বল বলেন, দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারাকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি, সেখানে ডেফিনিশনটা কেবল ভ্যাজাইনাল পেনিট্রেশনকে রিকগনাইজ করে। কিন্তু শব্দটা যদি কেবল পেনিট্রেশন হয়, সেক্ষেত্রে শরীরের যে কোনো জায়গায়, তা ওরালও হতে পারে, পেনিট্রেট করলেই সেটা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা আইনে থাকা ধর্ষণের সংজ্ঞার জেন্ডার নিউট্রালাইজেশন দাবি করেছি।