অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, সংক্ষিপ্ত সফরে ৪ অক্টোবর ঢাকায় আসছেন তিনি।
এ সময় আনোয়ার ইব্রাহিমকে প্রধান উপদেষ্টার ‘কাছের মানুষ’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আনোয়ার ইব্রাহিমের দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সম্পর্কে আপনারা জানেন এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে অধ্যাপক ইউনূসের খুবই কাছের মানুষ। খবর বিডিনিউজের।
তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রায় এক দশক পর মালয়েশিয়ার কোনো প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফরটি বর্তমান সরকারের সময়ে প্রথম কোনো সরকার প্রধানের বাংলাদেশে সফর। ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে গত ১৩ অগাস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী টেলিফোনে স্বাগত জানান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। একই সাথে তিনি নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতার আশ্বাস দেন। টেলিফোন সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এছাড়া কূটনৈতিক সূত্রে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ হতে আমন্ত্রণপত্রও প্রেরণ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আগামী ৪ অক্টোবর শুক্রবার বাংলাদেশে সরকারি সফরে আসছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলে সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রী, পরিবহন উপমন্ত্রী, ধর্ম বিষয়ক উপমন্ত্রী, দুইজন সংসদ সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ আরও কিছু প্রতিনিধি থাকবেন। ঢাকায় পৌঁছানোর পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে উষ্ণ সংবর্ধনা জানানো হবে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সফরকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্ত বৈঠকও করবেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
তৌহিদ হোসেন বলেন, এসব বৈঠকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি প্রেরণ, উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা, ব্যবসা ও বিনিয়োগ, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২৫ সালে মালয়েশিয়া আসিয়ান জোটের সভাপতি হিসেবে নেবে। ফলে, জোটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মালয়েশিয়ার সক্রিয় সহযোগিতার আহ্বান জানানো হবে। এছাড়াও, আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আসিয়ানে বাংলাদেশের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার বিষয়টিও বিশেষভাবে উত্থাপিত হবে। বড় পরিসরে দ্বিপক্ষীয় সফর আয়োজনের চিন্তা করা হলেও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় দ্রুততার সঙ্গে সফর আয়োজন করার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, উনি বললেন যে, ‘না আমি এখনই আসব, এসে উনার সাথে দেখা করে যাব’। তারা বলেছে, ‘অফিসিয়াল ভিজিট হিসাবে নিতে চাই’। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই সফরটি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা ও স্থায়ী বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে পরিগণিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
পাকিস্তান সফর শেষ করে ঢাকায় আসবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। আজ বুধবার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তার পাকিস্তান সফর হওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।