পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতি বছর ১ থেকে ১০ জিলহজ্ব পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় নগরে কোরবানির পশুর স্থায়ী–অস্থায়ী হাট বসে। এবারও চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুন থেকে হাট বসার কথা। ওই হিসেবে মাঝখানে বাকি আছে আর মাত্র ২১ দিন। তবে জেলা প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক অনুমতি না পাওয়ায় অস্থায়ী হাট বসাতে ইজারাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করতে পারছে না চসিক। অবশ্য প্রাথমিকভাবে নয়টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় চসিক। প্রস্তাবিত এসব অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে গত মাসে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করে সংস্থাটি। চসিকের কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার পর জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশের কাছে হাটগুলোর বিষয়ে মতামত চেয়ে গত ৫ মে চিঠি দেয়। তবে প্রস্তাবিত নয়টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের দুটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে নগর পুলিশ একটি এবং জেলা পুলিশ একটি হাট নিয়ে আপত্তি জানিয়ে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনে চিঠি দেয়।
আপত্তি থাকা প্রস্তাাবিত অস্থায়ী পশুর হাট দুটি হচ্ছে ১ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের চৌধুরীহাটস্থ অস্থায়ী পশুর হাট এবং ৩৮ নং ওয়ার্ডস্থ সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন পশুর বাজার। এছাড়া চসিকের প্রস্তাবিত বাকি সাতটি বাজার বসানোর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে বলে জেলা প্রশাসনকে জানায় সিএমপি। আপত্তি না থাকা বাজারগুলো হচ্ছে ৩ নং ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়, ৬ নং ওয়ার্ডস্থ কর্ণফুলী গরু বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট), ২৬ নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন মহেশখালের দুই পাড়স্থ খালি জায়গা, ৩৯ নং ওয়ার্ডের আউটার রিং রোড, সিডিএ, বালুর মাঠ, ৪০ নং ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, ৪০ নং ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ এবং ৪১ নং ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ। অর্থাৎ এই সাতটি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানো যাবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, এবার সাতটি অস্থায়ী হাটের পাশাপাশি তিনটি স্থায়ী পশুর হাটেও চসিকের ব্যবস্থাপনায় কোরবানির পশু বিকিকিনি চলবে। স্থায়ী পশুর হাটগুলো হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার।
আপত্তির কারণ : জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন পশুর বাজার নিয়ে সিএমপির স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রতিবেদনে বলা হয়, সল্টগোলা রেলক্রসিং বন্দর এলাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম স্থান। পশুর বাজারের জন্য প্রস্তাবিত জায়গাটিতে পশু বাজার বসানোর মতো স্থান নেই। উক্ত স্থানে একটি কবরস্থান আছে। পাশাপাশি উক্ত স্থানটি অস্থায়ী গ্যারেজ এবং স্থাপনা দ্বারা পরিপূর্ণ। বন্দরের যানবাহন, কাভার্ডভ্যান, লং ভেহিকেল, খোলা ট্রাক উক্ত রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। পশুর বাজার বসানোর মতো যথেষ্ট উন্মুক্ত স্থান না থাকায় বাজারের প্রভাব মূল রাস্তাসহ বন্দরের বিভিন্ন গেট যেমন লং ভেহিকেল গেট, ৫ নং গেট ও সিপিএআর গেটে পড়বে। এতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটবে।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সিএমপি জেলা প্রশাসনকে জানায়, সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় কোরবানির পশুর বাজার বসানোর অনুমতি প্রদান করা সমীচীন হবে না।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, ৯টির মধ্যে সাতটি বসানো হবে। সিএমপি একটি হাট নিয়ে আপত্তি দিয়েছে। জেলা পুলিশও একটি নিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়েছে। হাট বসানোর বিষয়ে জেলা প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ডিসি অফিসে পেন্ডিং আছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর (২০২৩) নগরে চসিকের ব্যবস্থাপনায় স্থায়ী–অস্থায়ী ১১টি পশুর হাট বসে। এর মধ্যে সাতটি অস্থায়ী এবং তিনটি স্থায়ী হাট ছিল। এছাড়া গতবার প্রথম হাটহাজারী উপজেলার চৌধুরীহাটের শতবর্ষী কোরবানির পশুর অস্থায়ী বাজার থেকে খাস আদায়ের মাধ্যমে হাসিল আদায় করে চসিক। বিষয়টি নিয়ে যদিও আপত্তি ছিল স্থানীয়দের। এবার প্রথমবারের মতো বাজারটিতে ইজারাদার নিয়োগের উদ্যোগ নিলেও হাটটি বসা নিয়ে আপত্তি আছে জেলা পুলিশের।
