বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে ‘গুমের’ যেসব অভিযোগ উঠেছে, জাতিসংঘের অধীনে তার তদন্তের উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে রাজধানীতে এক সংহতি সভায় তিনি গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারকে সরকারের তরফ থেকে ভাতা দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
ফখরুল বলেন, দীর্ঘকাল রাজনীতিতে আছি, অ্যারেস্ট হওয়া জানতাম, হত্যা করা জানতাম, কিন্তু গুম করে দেওয়া এটা আমাদের জানা ছিল না। এই আওয়ামী লীগ তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে ভয়াবহ মানবতাবিরোধী যে অপরাধ, সেই অপরাধ সংঘটিত করেছে। আজকে অত্যন্ত ভালো কথা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গুমবিরোধী জাতিসংঘের যে সনদে সই করেছেন। আমরা জানতাম আগের সরকার এটাতে (জাতিসংঘ সনদ) সই করে নাই। খবর বিডিনিউজের।
ফখরুল বলেন, আরও ভালো লাগছে যে, এই প্রথম বাংলাদেশে এই স্বৈরাচারের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করবার জন্য জাতিসংঘ থেকে একটি দল এসেছে; এটা প্রাথমিক দল, ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং টিম। কিন্তু এদের যে টার্মস অব রেফারেন্স, গত দুই মাসে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেটা তারা তদন্ত করবে। আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, যে আপনারা জাতিসংঘের যে মানবাধিকার কমিশন আছে, তাদের সাথে কথা বলেন। গত ১৫ বছর ধরে আজ পর্যন্ত যতগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, হত্যা হয়েছে, গুম হয়েছে প্রত্যেকটির তদন্তের ব্যবস্থা করুন। এটা আপনারা বললে জাতিসংঘ অবশ্যই করবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অত্যন্ত জোরের সঙ্গে, দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যে অত্যাচার–নিপীড়ন–হত্যাকাণ্ড, গুমের ঘটনা হয়েছে, প্র্রত্যেকটির তদন্ত এই জাতিসংঘের কমিটি দিয়ে করতে হবে এবং তার ব্যবস্থা সরকারকে নিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খুব কষ্ট পাই যখন দেখি রাজনৈতিক নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই সমস্ত ভয়ঙ্কর ব্যক্তি, যারা আমাদের হত্যা করেছে, খুন করেছে, গুম করেছে, তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার দেখতে পাব, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দেখতে পাব। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ যেন একটা জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে, সেজন্য আমরা কাজ করতে সক্ষম হব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই গুম–হত্যার প্রকল্প; আমি এটা বলি একটা প্রকল্প। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য একটা সার্বিক প্রকল্প করেছিলে, গুম তার একটি প্রকল্প ছিল। অর্থাৎ গুমের মাধ্যমে ভয়–ভীতি সঞ্চার করে সাধারণ মানুষ যাতে তার (শেখ হাসিনা) স্বৈরশাসনের বিরোধিতা করতে না পারে সেজন্য এই প্রকল্পে সে নিয়েছিল। সুতরাং এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা মূল নায়ক শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পের যারা নেতৃত্বে দিয়েছেন, তাদের স্বরূপ উদঘাটন করতে হবে, এই প্রকল্পে যারা সহায়তা দিয়েছে, সেই সত্য উদঘাটন করতে হবে। যারা জেনেশুনে চোখ বন্ধ করেছিল, জেনেও না জানার ভান করেছিল, দেখেও না দেখার ভান করেছিল, তাদেরকেও সামনে আনতে হবে। মোট কথা এই প্রকল্পের সার্বিক সত্যতা জনসম্মুখে আনতে হবে।