গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে আহতদের একটি বড় অংশ গুলিবিদ্ধ

| রবিবার , ৩ মার্চ, ২০২৪ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

গাজা সিটির কাছে গত বৃহস্পতিবার ত্রাণবাহী ট্রাকের বহর ঘিরে ফিলিস্তিনিদের ভিড়ের মধ্যে গুলির ঘটনায় আহতদের দেখতে আলশিফা হাসপাতালে গিয়েছিল জাতিসংঘের একটি দল। হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে জাতিংঘের দলটি বলেছে, আহতদের মধ্যে একটি বড় অংশ গুলিবিদ্ধ। অথচ নক্কারজনক এই ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিজেদের দায় অস্বীকার করে একেক সময় একক কথা বলছে। খবর বিডিনিউজের।

বৃহস্পতিবার ভোরের ঘটনায় ১১২ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৬০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলি সেনারা ওইদিন ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি করেছে বলে অভিযোগ করেছে হামাস। আর ইসরায়েল বলছে, ফিলিস্তিনিরা যখন ত্রাণবাহী ট্রাক থেকে ত্রাণ লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তারা তাদের সতর্ক করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং তাতে আতঙ্কিত হয়ে ফিলিস্তিনিরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পদদলিত হয়ে অনেক মানুষ মারা যায়। ঘটনার পরপর ইসরায়েল ত্রাণবাহী ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা প্রাণ হারিয়ে বলেও দাবি করেছিল। ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা ঝড় উঠেছে এবং বিশ্বনেতারা মানবিক বিপর্যকর ঘটনার পেছনে প্রকৃত কারণ কী ছিল তা খুঁজে বের করতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চলে পদাতিক অভিযান শুরচর পরপরই গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। প্রাণ ভয়ে তখন বহু ফিলিস্তিনি গাজার দক্ষিণাঞ্চলে চলে গিয়েছিল। এখন দক্ষিণাঞ্চলে আইডিএফর অভিযান চলছে। ফলে অনেকে আবার উত্তরাঞ্চলে ফিরে এসেছে। গাজার উত্তরাঞ্চলে বর্তমানে প্রায় তিন লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছে। তারা বলতে গেলে প্রায় না খেয়ে দিন পার করছে। এমনকি পানীয় জলটুকুও ঠিকমত পাচ্ছে না। নানা কারণে উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ বিতরণও তেমনভাবে সম্ভব হচ্ছে না। সমপ্রতি বিশ্ব খাদ্য প্রকল্প (ডাব্লিউএফপি) থেকে সতর্ক করে বলা হয়, গাজার উত্তরাঞ্চল দুর্ভিক্ষের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে গত কয়েক সপ্তাহে সামান্য ত্রাণ বিতরণ হয়েছে। দুর্ভিক্ষের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো তাই ত্রাণবাহী ট্রাক দেখে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। হাজারো মানুষ ত্রাণবাহী ট্রাকের পিছু নেয় এবং একপার্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লুটপাট শুরু করে।

বিবিসি জানায়, বৃহস্পতিবারের ঘটনার ভিডিও ফুটেজে গুলির শব্দ শোনা যায়। লোকজন লরির উপর মারামারি করছিল এবং বহুমানুষ ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোর পিছু নিয়েছিল। ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে আইডিএফ এর মুখপাত্র রেয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ধাক্কাধাক্কি এবং পদদলনে গাজার বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর নিউজ কে আইডিএফ এর লেফটেনেন্ট কর্নেল পিটার লার্নার বলেন, ফিলিস্তিনিদের দল ত্রাণের বহরের উপর হামলে পড়েছিল।

যে কারণে ইসরায়েলি বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তার আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ সিএনএন কে বলেছিলেন, গুলির ওই ঘটনার সঙ্গে ইসরায়েল কোনোভাবেই সরাসরি জড়িত নয়। এবং ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র দল ওই গুলি ছুড়েছে। যদিও তিনি তার এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি বলে জানায় বিবিসি।

দ্য ইউএন কোঅর্ডিনেটর ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) এর গাজা সাবঅফিসের প্রধান জর্জিওস পেট্রোপোলোস বিবিসিকে বলেন, তিনি এবং আলশিফা হাসপাতালে পাঠানো তাদের দলটি সেখানে গুলিবিদ্ধ অনেককে চিকিৎসা নিতে দেখেছেন। বলেন, ত্রাণ নিতে যাওয়া ভিড়ের মধ্যে গুলির ঘটনার পর আমি হাসপাতালের জরচরি চিকিৎসা কক্ষে যাই এবং ৭০ থেকে ৮০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাজায় ৭ ইসরায়েলি জিম্মি নিহত হয়েছে : হামাস
পরবর্তী নিবন্ধগ্রহ-পানির যোগসূত্র, সমাধান করতে পারে পৃথিবী গঠনের রহস্য