পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। ইতিহাস জানাচ্ছে, নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এর আগে একবার মাত্র ধবলধোলাই হওয়ার রেকর্ড ছিল পাকিস্তানীদের। দুই বছর আগে ইংল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল পাকিস্তান। সেই ১৯৫৪ সাল থেকে টেস্ট খেলা একটি দেশকে দ্বিতীয়বারের মত দুই টেস্টের সিরিজে নাকানি চুবানি খাওয়ানো সহজ কাজ নয়। সে স্মরণীয় কৃতিত্বটি এবার দেখিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। টিম ইফোর্ট ও পারফরমেন্সের আদর্শ উদাহরণ দেখিয়ে পাকিস্তানীদের নিজের মাটিতে তুলোধুনা করেছে টিম বাংলাদেশ। কারো একার বা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে নয়, পুরো দল বিশেষ করে মেহেদি হাসান মিরাজের দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং নৈপুণ্য (১৫৫ রান ও ১১ উইকেট), মুশফিকুর রহিম–লিটন দাসের দুর্দান্ত ব্যাটিং এবং সাদমান ইসলাম, সাকিব আল হাসান ও পেসার শরিফুল, তাসকিন, নাহিদ রানা আর হাসান মাহমুদের বিধ্বংসী পেস বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তানীরা।
শান্ত বাহিনীর দুর্দান্ত পারফরমেন্সের পরও একটা কথা অনেকের মুখেই উচ্চারিত হচ্ছে। তাহলো পাকিস্তানের এ দলটি ফর্মে নেই একদমই। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান কেউই রানে ছিলেন না। বোলারদের অবস্থাও খারাপ। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের দুর্বলতম দল ছিল এবার শান মাসুদের দলটি। সেই দলটিকে যথাক্রমে ১০ উইকেট আর ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারাতে পারলেও অনেকেরই কৌতূহলি প্রশ্ন, পাকিস্তানকে নাকানি চুবানো খাওয়ালেও বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, জাসপ্রিত বুমরা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর রবিন্দ্র জাদেজার গড়া ভারতের ভারতের সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দলের সাথে পেরে উঠবে বাংলাদেশ? টাইগার টিম ম্যানেজমেন্টের আত্মবিশ্বাস ও আস্থা কেমন। হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কথা শুনে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ দল যথেষ্ঠ আত্মবিশ্বাসী। কোচ হাথুরু এই দলকে নিয়ে যথেষ্ঠ আশাবাদী। তার ধারণা বর্তমান সময়ে টেস্টে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিপূর্ণ এবং সেরা দল। যে দলের বোলিংটা বেশ সাজানো গোছানো।
নিজ দল সম্পর্কে হাথুরু বলেন আমার মনে হয়, সম্ভবত এই সময়ের টেস্ট দল সবচেয়ে পরিপূর্ণ। আমরা অনেক পেসার নিয়ে এসেছি। কয়েকজন ভালো গতির বোলার পেয়েছি। আমাদের স্পিন বিভাগেও অভিজ্ঞতা আছে। ব্যাটিং নিয়ে বলতে গিয়ে টাইগার কোচের মূল্যায়ন, ব্যাটিংয়ে গভীরতা আছে দুটো কারণে। আমাদের দুজন স্পিনার সত্যিকারের ব্যাটার। তাদের টেস্ট শতক আছে। আর উইকেটরক্ষক আমাদের মূল ব্যাটার। এজন্য এই সিরিজে দলের ভারসাম্য খুব ভালো। এটা আমাদের আসলে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে যে আমরা এই সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারব। ভারতের বিপক্ষে খেলা মানে বাড়তি চাপ, তা মানতে নারাজ হাথুরু। বরং তার মনে হয় চাপটা দলের জন্য সুবিধার। ‘চাপ আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা দেবে। আমার মনে হয়, অনেকেই বিশ্বাস করে, সামনে তাকানোর মতো কিছু একটা আছে। কিন্তু এরপর আমরা আসলেই বুঝতে পেরেছি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। শক্তি ও দুর্বলতা কতটুকু। দুনিয়ার সেরা দলের সঙ্গে খেলতে আমরা সত্যিই উদ্বুদ্ধ। ভারতের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে খেলাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেটা মেনে ওই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে চান হাথুরু। ভারতে এসে তাদের বিপক্ষে খেলা, এটাই এখনকার দিনের ক্রিকেটে সেরা চ্যালেঞ্জ। সেরা দলের সঙ্গে খেলাটা সবসময় আপনাকে বুঝিয়ে দেয়, কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন স্পোর্টসম্যান হিসেবে। আমরা ওই চ্যালেঞ্জটার দিকেও তাকিয়ে আছি।