আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে স্বামীকে হত্যা

আদালতে স্ত্রীর স্বীকারোক্তি

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ২৫ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাইয়ে পারিবারিক কলহের জের ধরে প্রবাস ফেরত স্বামী এমদাদুল হককে (৪৮) পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন ঘাতক স্ত্রী নারগিস মোস্তারি (৪০)। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন নারগিস ও ভাড়াটে খুনী আইয়ুব নবী (২২)। নিহত এমদাদুল হক উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর গ্রামের ফরাজি বাড়ির মৃত মনছুর আহম্মদের পুত্র।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে নারগিস জানান, ২০০৪ সালে এমদাদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী প্রবাসে থাকতেন। প্রবাসে থাকাকালীন ঠিকমতো টাকা পয়সা দিতেন না, অনেক কষ্ট দিত। এর মধ্যে তাদের দুটি সন্তানের জন্ম হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্বামী স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসেন।

দেশে আসার পরও ঠিকমত টাকা পয়সা খরচ করত না। এ নিয়ে তার সঙ্গে প্রায়ই মনোমালিন্য হত। তার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে খুনের পরিকল্পনা করি। এরপর বিষয়টি গৃহকর্মী আইয়ুব নবীকে বলি। সে প্রথমে রাজি না হলেও পরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার পরিকল্পনা মত কাজ করতে রাজি হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার তিনদিন আগে বাবার বাড়িতে থেকে স্বামীর বাড়ি ওয়াহেদপুরে চলে আসি। আসার সময় সাহেরখালী ভোরের বাজারের একটি ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ কিনে নিয়ে আসি। মঙ্গলবার বাদে আসর রান্না করা সেমাইয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্বামীকে খেতে দিই। তিনি অচেতন হয়ে

পড়লে আইয়ুব নবীকে ফোন করে দ্রুত বাড়িতে আসতে বলি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সে যখন ঘরে আসে তখন স্বামীর জ্ঞান ফিরে আসে। তখন তাকে বলি ডাক্তার এসেছে, তোমার চিকিৎসা হবে। এরপর আমি দুইহাতে তার একহাত চেপে ধরি, আইয়ুব নবী আরেক হাতে জিআই তার পেছিয়ে মাল্টিফ্লাগ থেকে সংযোগ দিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর মাল্টিফ্লাগ পাশের পুকুরে ফেলে দিই।

জবানবন্দিতে নারগিস আরো বলেন, মারা যাওয়ার পর স্বামীর মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে আইয়ুব নবীকে ভাড়ার জন্য দিই। এরপর রাতে সে নিজের বাড়ি চলে যায়। পরবর্তীতে রাত ২টার দিকে দেবর কামাল পাশাকে ফোন করে তার ভাই বিদ্যুৎপৃষ্টে মারা গেছে বলে জানাই।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রবাসী এমদাদের ছোট ভাই কামাল পাশা বাদি হয়ে গত বৃহস্পতিবার ভাবী নারগিস মোস্তারি ও গৃহকর্মী আইয়ুব নবীকে আসামি করে মীরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি জানান, আমরা শুরু থেকে বলেছি আমার ভাইকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।

আদালতে দেয়া আসামির জবানবন্দি অনুযায়ী আমাদের কথা সত্য হয়েছে। আমি মীরসরাই থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য। আমরা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

মীরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন বলেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার আলামত হিসেবে জিআই তার, মাল্টিফ্লাগ ও ৫০০ টাকার একটি নোট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার ভোরে ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর এলাকায় এমদাদুল হকের ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এসময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্ত্রী নারগিস মোস্তারিকে আটক করা হয়। একইদিন ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আইয়ুব নবীকেও আটক করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহাসড়কের পাশে হাঁটার সময় গাড়ি চাপা, কিশোর নিহত
পরবর্তী নিবন্ধঅবশেষে ২৩ শহীদের কবর এক জায়গায়