চট্টগ্রামকে আরও সুন্দর এবং নান্দনিক পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সুন্দর নগর। অনেক বিশেষণ চট্টগ্রামের। কিন্তু এখন শুনি, চট্টগ্রাম বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেরাই বিবর্ণ করছি। নদী, পাহাড়, জলাশয়, সবুজ ধ্বংস করছি। তাই একযোগে কাজ করতে হবে। আমি দায়িত্ব নিয়ে সব সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছি। সফল হয়েছি বলেই স্মার্ট পে–পার্কিং চালু করতে পারছি। বাস টার্মিনাল শহরতলীতে নেওয়া গেলে যানজট কমবে।
গতকাল রোববার দুপুরে নগরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা পে–পার্কিংয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হোটেল আগ্রাবাদে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ আহাম্মদ। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নাগরিক সমস্যা সমাধানে ডিজিটাল সলিউশন আনার চেষ্টা করছি আমি। এর অংশ হিসেবে যানজট কমাতে আগ্রাবাদে পে–পার্কিং চালু করা হলো। এই পাইলট প্রকল্পের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে নগরে আরো পে–পার্কিং স্পট চালু করা হবে। ইতোমধ্যে শহরের ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল সরাতে ৩ ওয়ার্ডে ঝুলন্ত তারকে মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মেয়র বলেন, সড়ক ও ফুটপাত হকারমুক্ত করছি। হকারদের জন্য নাইট মার্কেট, হলিডে মার্কেট চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছি। বহুতল পার্কিং গড়ে তুলতে বড় সমস্যা জায়গার অভাব। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে স্পিড লিমিট ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছি। স্মার্ট পে–পার্কিং নবযুগের সূচনা করছে। আমার মনে হয়, সঠিক পরিকল্পনা না করলে ১৫–২০ বছরে চট্টগ্রাম পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হবে। চট্টগ্রামকে আমরা নান্দনিক পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলব।
সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, নগরে গাড়ি পার্কিং করা নিয়ে যে বিশৃঙ্খলা তা পে–পার্কিংয়ের মাধ্যমে লাঘব হবে বলে আশা করি। আধুনিক সিগনাল সিস্টেম চালু হলে যানজট অনেকাংশে কমবে। তিনি বলেন, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সাহস করে হকার উচ্ছেদ করে সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু হকার উচ্ছেদ করার পরপরই দেখা যাচ্ছে আবার রাস্তা দখল হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএ একযোগে কাজ করতে হবে। তবেই এর সুফল পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, পে–পার্কিং পুরো শহরে ছড়িয়ে দিতে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব। পার্কিং ফি লাভের জন্য নয়, এটি রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। এটি দিতে হবে। তিনি বলেন, ভবনের নকশা অনুমোদনে পার্কিং থাকতে হবে। বহুতল ভবন, শপিং সেন্টারের পার্কিং স্পেস উদ্ধারে একযোগে অভিযান চালাব। ট্রাফিক সিগনাল আধুনিক করে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। কারণ চট্টগ্রাম ইট–পাথরের বস্তি হয়ে গেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ আহাম্মদ বলেন, প্রধান সড়ককেন্দ্রিক যেসব মাল্টিস্টোরেজ কমার্শিয়াল ভবন হবে ও আবাসিক ভবন হবে, সেখানে যাতে পার্কিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখে তার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় চসিকের স্মার্ট পে–পার্কিং চালু। পে–পার্কিং আমাদের জন্য নতুন কনসেপ্ট। বহির্বিশ্বে আগে থেকে আছে। তিনি বলেন, নগরের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। মাস্টার প্ল্যানে বাসস্টেশন শহরের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। তবে নাগরিকদের দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, বি–ট্র্যাক সলিউশন নামের একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় সিলভার স্পুনের সামনে এবং ডাচ–বাংলা ব্যাংকের সড়কে মোট ১৭৭টি গাড়ির পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাগরিকরা ইয়েস পার্কিং অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন এবং নগদ টাকা দুভাবেই পার্কিংয়ের জায়গা ভাড়া নিতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল, আবদুস সালাম মাসুম, আতাউল্লাহ চৌধুরী, শাহীন আক্তার রোজী, রুমকি সেনগুপ্ত, চসিক সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী শাহীন শাহীন–উল–ইসলাম চৌধুরী, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম, জসিম উদ্দিন, চসিকের পক্ষে পে–পার্কিং বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদ শাফকাত আমিন, বি–ট্র্যাক সলিউশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম তানভীর সিদ্দিকী ও প্রকল্প প্রধান সাফায়েত আবদুল্লাহ।