চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরী : রূপসী চট্টগ্রামের রূপকার

আবদুস সবুর লিটন | বুধবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ

বীরের মৃত্যু নেই, বেঁচে থাকে বীরত্বের গল্প কবিতায়। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার মধ্য দিয়েই একজন সাধারণ মানুষ পরিণত হন গণমানুষের নেতায়। ভাষা, ভঙ্গি আর স্বভাবসুলভ উচ্চারণের মাধ্যমে মানুষের সুখ-দুঃখকে নিজের অনুভূতির সাথে এক সূতোয় বেঁধে যিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন, তিনি হলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম। এক অদম্য রাজনীতিবিদের নাম। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের সেই ছোট্ট বালকটি তার মেধা, শ্রম, ত্যাগের বিনিময়ে ধীরে ধীরে খেতাব পান চট্টলবীরের। সমাজ ও রাজনীতিতে সবাই নেতা বা নায়কের স্থান করে নিতে পারেন না। ইতিহাসে নায়ক হওয়ার মতো মানুষ সব কালে, সব যুগে সৃষ্টি হয় না। ইতিহাস আপন তাগিদে নায়কের উদ্ভব ঘটায়। চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী তেমনি এক অবিসংবাদিত নেতা, যার সৃষ্টি ইতিহাসের প্রয়োজনে। যাকে আমি ভীষণ ভালোবাসতাম। তিনিও আমাকে খুব স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। শুধু আমাকে ভালোবাসতেন তা না পরিবারের সব সদস্যের তিনি নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন। আমি একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে তাঁর কাছে যাবার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই সম্পর্কের সূত্রেই উনার বাসায় আমার যাওয়া আসা ছিল। চট্টগ্রামের কালজয়ী পুরুষের মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ বারে বারে বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে, তেমনি মনে পড়ে চট্টগ্রামের স্বার্থে দেশ-জাতির নানা সংকট-সম্ভাবনার সময়ে অসাধারণ কীর্তির কথা। ভুলতে পারবে না বীর চট্টলার জনসাধারণ। মেধা, প্রতিভা, সৃজনশীলতা, কর্মোদ্দীপনা, অনমনীয় মনোবল, কর্মনিষ্ঠা ও অধ্যবসায় দ্বারা তিনি অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কালের পাতায় রেখে গেছেন চিরস্মরণীয় কর্মবাগান।
জেনেছি একাত্তরে পাগলের অভিনয় করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন প্রয়াত এই নেতা। ছাত্র অবস্থায় রাজনীতি ও বিপ্লবে জড়িয়ে পড়েন। আন্দোলন ছিলো তাঁর শিরা-উপশিরায়। তার হাত ধরেই চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ হয়েছে। তাই তাকে বলা হয় অবহেলিত চট্টগ্রামের কাণ্ডারী। বারবার আঘাত পেয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে পেয়েছিলেন ‘চট্টলবীর’ উপাধি।
তিনি চট্টগ্রামের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। চট্টগ্রাম স্বার্থ রক্ষায় তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। মেয়র থাকাকালীন ভোর বেলায় উঠে পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতেন।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর একটি অনন্য গুণ ছিলো- তিনি বেওয়ারিশ, পচন ধরা লাশও নিজ হাতে গোসল ও সমাহিত করতেন। চট্টগ্রামের রাজনীতিকদের মধ্যে এ কাজটি শুধু তাকেই করতে দেখা যেতো। আমার এখনো মনে পড়ে, ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের কেটিএস গার্মেন্টস ট্র্যাজেডিতে ৬১ জন শ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছিল। মহিউদ্দিন চৌধুরী বেওয়ারিশ অনেক লাশ নিজ হাতে সমাহিত করে মানব সেবার অনন্য নজির স্থাপন করে ছিল সেদিন। এর আগে ৯১’র ঘূর্ণিঝড়ে একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গিয়েছিল তাকে।
আসলে আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মত রাজনীতিবিদদের আদর্শ, দর্শন, চেতনা ও সংগ্রামকে ধারণ করার মত যোগ্যতা খুব কম জনেরই থাকে। উনার সত্যিকার রাজনৈতিক উত্তারাধিকার হওয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় হবে। বহুমাত্রিক রাজনীতিক ও মেধাবী রাজনৈতিক কর্মী সৃষ্টির সৃজনশীল সুনিপুণ কারিগর ছিলেন তিনি। এই কিংবদন্তী নেতা আর কোনোদিন আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন না। তাঁর জীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জন্য আদর্শের পাঠশালা হয়ে থাকবে। আজকের রূপসী চট্টগ্রাম তারই অবদান।
লেখক : প্যনেল মেয়র-১,
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও
কাউন্সিলর ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ড।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বে চরম দরিদ্র হয়েছে ৫০ কোটির বেশি মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধবিজয় মানে