মহামানব মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.)

মোহাম্মদ আমান উল্লাহ খান | মঙ্গলবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ

মহানবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.) ছিলেন উম্মি অর্থাৎ নিরক্ষর। তিনি আরবের কোরাইশ বংশের বনি হাশেম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। সে দিক থেকে তিনি জন্মগতভাবে ছিলেন যথেষ্ট সম্ভ্রান্ত। অথচ তিনি সৎ, ন্যায়পরায়ন ও বিশ্বাসভাজন ছিলেন বিধায় আল-আমিন বলে পরিচিত ছিলেন।
আবদুল মোত্তালেবের ন্যায় একজন অত্যন্ত সম্মানিত নেতার পৌত্র, হামজা (রদ.), আব্বাস (রদ.) ও আবু তালেবের ন্যায় বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অত্যন্ত স্নেহের ভাইপো ছিলেন তিনি। তবুও তিনি ছিলেন উম্মি অর্থাৎ নিরক্ষর। ব্যাপারটি সাধারণ বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তার পবিত্র জীবনে এমন ব্যতিক্রমতার আসল কারণ তাঁর প্রকৃত প্রতিপালক কোন ব্যক্তি নন। তাঁর প্রকৃত প্রতিপালক খোদা রাব্বুল আলামীন। তিনি তার শিক্ষক, যে কারণে তিনি মানুষকে তার শিক্ষক হতে দেন নি। যদি কোন মানুষের কাছে তাঁকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হতো তাহলে উক্ত ব্যক্তি তাঁর শিক্ষক হয়ে যেত। স্বাভাবিকভাবে একজন শিক্ষক তার ছাত্রের কাছে শ্রদ্ধাভাজন হবেই। অথচ এক আল্লাহ ছাড়া আর কেহ কোন সময়ে মহানবীর শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন হযরত আবু সুফিয়ান (রাদ.) এর ন্যায় সম্মানিত ব্যক্তিত্বের শ্রদ্ধাভাজন। নিরক্ষর হয়েও তিনি ছিলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। আজীবন সত্যভাষী মহানবী (সা.) নিজেই ফরমায়েছেন- আমি জ্ঞানের নগর এবং আলী (রদঃ) তার প্রবেশদ্বার।
স্যার সৈয়দ আমির আলীর মন্তব্য এ স্থলে প্রণিধানযোগ্য- গবফরহধ, ঃযব ংবধঃ ড়ভ ঃযব ঃযবড়পৎধঃরপ পড়সসড়হ বিধষঃয ড়ভ ওংষধস, যধফ ধভঃবৎ ঃযব ভধষষ ড়ভ গবপপধ, নবপড়সব ঃযব পবহঃৎব ড়ভ ধঃঃৎধপঃরড়হ, হড়ঃ ঃড় ঃযব যড়ংঃ ড়ভ অৎধনরধ ড়হষু, নঁঃ ধষংড় রহয়ঁরৎরবং ভৎড়স ধনৎড়ধফ. ঐবৎব ভষড়পশবফ ঃযব চবৎংরধহ, ঃযব এৎববশ, ঃযব ঝুৎরধহ, ঃযব ওৎধহরধহ ধহফ ঃযব অভৎরপধহ ড়ভ ফরাবৎং যঁবং ধহফ হধঃরড়হধষরঃরবং ভৎড়স হড়ৎঃয ধহফ বিংঃ. ঝড়সব হড় ফড়ঁনঃ, পধসব ভৎড়স পঁৎরড়ংরঃু, নঁঃ সড়ংঃ পধসব ঃড় ংববশ শহড়ষিবফমব ধহফ ষরংঃবহ ঃড় ঃযব ড়িৎফং ড়ভ ঃযব ঢ়ৎড়ঢ়যবঃ ড়ভ ওংষধস.
এ প্রখ্যাত ঐতিহাসিকের উপরোক্ত বক্তব্য থেকে অনুধাবন করা যায় যে, মহানবী (সা.) এর জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য শ্রবণের জন্য সে যুগের জ্ঞানান্বেষী বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ মহানবীর সাহচার্য লাভের জন্য বহু দেশ থেকে পবিত্র মদীনা নগরীতে আগমন করতেন। সেখানে মদীনা নগরীতে মহানবী (সা.) জ্ঞানের আলোচনা ও গবেষণার যে কেন্দ্র স্থাপন করেন তা পরবর্তীকালে বাগদাদ, সেলানো কায়রো এবং করভোভাতে বিশাল বিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও জ্ঞান বিজ্ঞানের গবেষণা কেন্দ্র সমূহের জন্ম প্রদান করে। স্যার সৈয়দ আমীর আলীর এম মন্তব্যই শুধু সার্বিক বক্তব্য বলে বলা যাবে না মোটেই। পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক এর মতে ইসলামের এ উম্মী নবীকে শুধুমাত্র অন্যান্য ধর্ম প্রচারক বা দার্শনিকদের ন্যায় শুধু ধর্ম প্রচার বা মতবাদ প্রচারের মধ্যে জীবনের সার্বিক কর্মকাণ্ডকে সীমাবদ্ধ রাখেন নি। কেবল মুসলমানের মুক্তির জন্য তার আগমন হয়নি, তার জন্ম এবং কর্ম সমস্ত পৃথিবীর মানব জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে। সে মুক্তি ধর্মীয়, সামাজিক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকসহ মানব জীবনের সকল দিক পরিব্যাপ্ত ছিল। তাঁর আগমন হয় এমন সময় যখন সমস্ত পৃথিবী কুসংস্কার, দারিদ্র্য এবং ক্ষমতাবান শাসকদের নিষ্ঠুর শাসনে নিষ্পেষিত। তাঁর জন্মের শুভক্ষণে পৃথিবী অবলোকন করলো সম্পূর্ণ অন্য একটি বিশ্ব। সবচেয়ে বড় কথা, পৃথিবীর সকল অশিক্ষিত, গরীব অসহায় মানুষ পেল জ্ঞান বিজ্ঞানের সন্ধান যা সকল রোগের মহৌষধ। বৃটিশ ঐতিহাসিক পিকে হিট্টি এবং খৃষ্ঠান ধর্মাবলম্বী হয়েও অকপটে স্বীকার করেছেন-
ঘড় চবড়ঢ়ষব রহ ঃযব গরফফষব ধমবং ঈড়হঃৎরনঁঃবফ ঃড় যঁসধহ ঢ়ৎড়মৎবংং ংড় সঁপয ধং ফরফ ঃযব অৎধনরধহং ধহফ ঃযব অৎধনরপ ংঢ়বধশরহম ঢ়বড়ঢ়ষবং.
ঐতিহাসিক ঐরঃঃর এর অন্য একটি মন্তব্য দিয়ে আমার সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ শেষ করেছি।
ঐরসংবষভ ধহ ঁহংপযড়ড়ষবফ সধহ গঁযধসসধফ ধিং হবাবৎ ঃযব ষবংং ৎবংঢ়ড়হংরনষব ভড়ৎ ধ নড়ড়শ ংঃরষষ পড়হংরফবৎবফ নু ঃযব ড়হব-বরমযঃয ড়ভ সধহশরহফ ধং ঃযব বসনড়ফরসবহঃ ড়ভ ধষষ ংপরবহপব, রিংফড়স ধহফ ঃযবড়ষড়মু (ঞযব যরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব অৎধনং-১২২)
যে পবিত্র গ্রন্থ মানবজাতির মাঝে প্রচার করার মহৎ উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.) এর আগমন সে পবিত্র গ্রন্থ সম্পর্কে একজন অমুসলমান বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিকের স্বীকৃতি- ঞযড়ঁময ঃযব ুড়ঁহমবংঃ ড়ভ বঢ়ড়পয- গধশরহম নড়ড়শং, ঃযব কড়ৎধহ রং ঃযব সড়ংঃ রিফবষু ৎবধফ নড়ড়শ বাবৎ ৎিরঃঃবহ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব অৎধনং-চ-১২৭
আরবের নিরক্ষর একজন মানুষ যিনি যৌবনে অসভ্য বর্বর স্বজাতির কাছে “আল আমিন” রূপে সম্মানিত হয়েছেন এবং জন্মের মাত্র দুইশত বছরের মধ্যে তার শিক্ষা ও চরিত্র সমস্ত পৃথিবীব্যাপি এমন সভ্যতার সৃষ্টি করলো যা সকল জ্ঞান বিজ্ঞান, মানবতা ও সভ্যতার আধাররূপে পৃথিবীতে হাজার বছর বিশ্বমানবতার উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকলো। তার কথা আর ক্ষুদ্রতম কাজ সমূহ পর্যন্ত তার অনুসারীরা সযত্নে রক্ষণ করলেন, এমন যুগে যখন কাগজ কলমের প্রচলন এত সহজ ছিল না, তাঁর বাণী সমূহ তারা মুখস্ত করে রেখেছিলেন যাতে তা পবিত্র কোরআনের সাথে সংমিশ্রিত হয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে। তাঁর পবিত্র বাণী সমূহ হাদীস শরীফ রূপে ছাহাবাগণ সযত্নে সংরক্ষণ করেছেন এবং তার জীবনাবসানের প্রায় দেড় হাজার বছর পার হওয়ার পরেও সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় আজও বর্তমান। পরম সম্মানের সাথে বিশেষ গুণী ও জ্ঞানীগণ কর্তৃক পঠিত হচ্ছে এবং যুগ যুগ ধরে তার উপরে গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। পৃথিবীতে কোন মহান ব্যক্তি এত গুরুত্ব ও সম্মান পান নাই আর পাবেন না। লেখক : প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাওলানা ভাসানী ও ফারাক্কা লং মার্চ
পরবর্তী নিবন্ধঅর্ধ-যুগপূর্তিতে কণ্ঠনীড়ের আয়োজন আমরা করবো জয়