টেকনাফে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত সাবেক মেম্বারের ছেলে

টেকনাফ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৩ at ৬:৪৩ অপরাহ্ণ

মাথায় ও বুকে বন্দুক তাক করা, বুকে পা, গলায় লম্বা কিরিচ, চোখে গামছা বাঁধা। শুইয়ে রেখেছে মাটিতে। যেন এক্ষুনি গলায় কিরিচ চালিয়ে এবং বন্দুকের ট্রিগার চেপে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে এমন ছবি বা ভিডিও ফুটেজ মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠিয়ে আতংকিত করছে। এতে দ্রুত সময়ে কাংখিত মুক্তিপণও আদায় হচ্ছে।

এভাবে প্রায়ই অপহরণ করে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে দুর্বৃত্তরা মুক্তিপণ আদায় করে যাচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে।

এভাবেই টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ফুলের ডেইল গ্রামের আলোচিত সাবেক মেম্বার সামশুল আলম বাবুলের ছেলে আল ফায়সালকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে দুর্বৃত্তরা।

অপহরণের পাঁচ দিন পর আজ বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকালে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। এসময় তাকে প্রচুর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়সাল। সে কক্সবাজার সিটি কলেজের শিক্ষার্থী।

জানা যায়, গত ১৫ এপ্রিল ভোরে সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজ আদায় করতে প্রতিদিনের মতো মসজিদে যায় ফায়সাল। আর ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন আত্মীয়-স্বজনসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে তাকে খুঁজতে থাকে। কোথাও না পেয়ে এক পর্যায়ে বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার আনাগোনা দেখা যায়। ফলে অপহরণ হওয়ার সন্দেহ হয় তাদের কারণ সম্প্রতি টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টমটম গাড়িতে করে অপহরণের অহরহ ঘটনা ঘটছে।

অবশেষে একদিন পর মোবাইল ফোনে কল আসে ফায়সালকে অপহরণ করা হয়েছে। জীবিত ফেরত পেতে চাইলে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। পুলিশ কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনীকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করা হয়। এমনকি অপহরণকারীরা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে কল দিয়ে যোগাযোগ করত।

অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্রিক ফিল্ডস্থ স্থানে ফায়সালকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেয় অপহরণকারীরা।

অপহৃত ফায়সালের পিতা ২নং হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার সামশুল আলম বাবুল বলেন, “কিছু স্থানীয় দুষ্কৃতকারী মিলে অপহরণের এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জমি বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছেলে ফায়সালকে অপহরণকারীদের কবল থেকে ফিরিয়ে এনেছি। ছেলেকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে।”

এ ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা রুজু করার প্রস্তুতি চলছে এবং আগামীকাল শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে, স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়, শামসুল আলম বাবুল মেম্বার আলোচিত মাদক কারবারি। হয়তো ইয়াবাসহ মাদকের দেনা-পাওনা সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে অপহরণের বিষয়টি সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। অপহরণ বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন তারা।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নাছির উদ্দীন এখনো অভিযোগ পাননি বলে জানান। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি পুরো টেকনাফবাসী অপহরণ আতংকে বিরাজ করছে। সন্ধ্যা নামলেই গ্রাম-গঞ্জে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। এমনকি মসজিদে নামাজ আদায়ে যায় না অনেকে। এই দুর্বৃত্তদের দমন করতে পাহাড়ে ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা জরুরি বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্রেতার সাথে দুর্ব্যবহার করায় লোহাগাড়ায় জুতা দোকানিকে জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধচন্দনাইশে তেলবাহী ট্রাকের সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ১