বাড়ি ভাড়া ভাতা বাড়িয়ে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্তে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা। তবে শিক্ষক–কর্মচারীরা এই টাকা পাবেন দুই ধাপে। ১৫ শতাংশের মধ্যে চলতি বছরের নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে সাড়ে ৭ শতাংশ বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আর বাকি সাড়ে ৭ শতাংশ আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে সম্মতি জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষক–কর্মচারীদের আন্দোলনের দশম দিনে মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ নির্ধারণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে গত ১২ অক্টোবর শুরু হওয়া শিক্ষক–কর্মচারীদের আন্দোলনের দশম দিনে তাদের বাড়ি ভাড়া ভাতা আবারও পুনর্নির্ধারণ করা হলো। তবে শিক্ষক–কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা অপরিবর্তিত থাকছে। খবর বিডিনিউজের।
অর্থ বিভাগ বলছে, পরবর্তী বেতন স্কেলে বর্ণিত অতিরিক্ত সুবিধাটি সমন্বয় করতে হবে। এমপিও নীতিমালা ও সরকারের নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষক–কর্মচারীদের নিয়োগের শর্ত পূরণ করতে হবে। বাড়ি ভাড়া ভাতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিক্ষক–কর্মচারীরা কোনো বকেয়া পাবেন না।
শিক্ষক–কর্মচারীদের এ ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক বিধি–বিধান অবশ্যই পালন করতে হবে জানিয়ে অর্থ বিভাগ বলছে, এ ভাতা সংক্রান্ত ব্যয়ে ভবিষ্যৎ কোনো অনিয়ম দেখা দিলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ অনিয়মের জন্য দায়ী থাকবেন।
গতকাল সকাল থেকেই সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা করছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষক–কর্মচারীরা। দুপুর পৌনে ১টায় শিক্ষা উপদেষ্টা এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজীর হাতে অর্থ বিভাগের সম্মতিপত্র হস্তান্তর করেন।
এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, একটা বাস্তবসম্মত ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলো বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারী নিয়ে। শিক্ষকরা আমাদের দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু তাদের যে বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা যথেষ্ট রকমভাবে কম।
শিক্ষক–কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে সচেতন ও সচেষ্ট থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) কোনো ত্রুটি ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছি। যতই আমরা চাই না কেন আমাদের মনে রাখতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সময় দেশের দায়িত্ব নিয়েছে তখন অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই ভঙ্গুর ছিল, সে অবস্থান থেকে উত্তরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
শিক্ষক কর্মচারীদের যা যা দাবি ছিল তার যৌক্তিকতা নিয়ে কখনোই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশয় ছিল না মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, তবে আমাদের সম্পদের বিবেচনায় তাদের বাড়ি ভাড়া ভাতা (৫ শতাংশ বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা) নির্ধারিত হয়েছিল।
জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী এ সময় অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আজ বুধবার থেকে শ্রেণিকক্ষে ফেরার ঘোষণা দেন। তিনি এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ করতে এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি চালু করতে শিক্ষা উপদেষ্টাকে অনুরোধও জানিয়েছেন।
ভাতা আগে কত বেড়েছিল : ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রথম দফায় ৫০০ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার। তবে ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন। এরপর ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১২ অক্টোবর থেকে শিক্ষক–কর্মচারীরা লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন।
আন্দোলনের মধ্যে ১৯ অক্টোবর মূল বেতনের ৫ শতাংশ বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা নির্ধারণ করা হয় শিক্ষক–কর্মচারীদের জন্য। তবে শিক্ষক–কর্মচারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা নির্ধারণে নিজেদের দাবিতে অনড় অবস্থান নেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা দুই দফায় বাড়িয়ে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা ও এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।










