শেখ হাসিনা ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা-নাতিপুতি বলায় তারা অপমান বোধ করেন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নাহিদের সাক্ষ্য

| বৃহস্পতিবার , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যায়িত করায় সারা দেশের ছাত্রছাত্রীরা অপমানিত বোধ করেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চব্বিশের জুলাইআগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৭ তম সাক্ষী হিসেবে নাহিদ ইসলাম তার জবানবন্দিতে গতকাল এ কথা বলেন। খবর বাসসের।

বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল১ এ দেয়া জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি অভিহিত করে কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। মূলত এই বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের বৈধতা দেয়া হয়।

কারণ, তারা সব সময় দেখেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য আন্দোলন করা হলে তাদের রাজাকারের বাচ্চা আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের ন্যায্যতা নস্যাৎ করা হতো। ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যায়িত করায় সারা দেশের ছাত্রছাত্রীরা অপমানিত বোধ করেন। সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৭ জুলাই রাতে দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাদের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন (১৮ জুলাই) সারা দেশের সর্বস্তরের ছাত্রজনতা রাস্তায় নেমে আসেন। বিশেষত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা সেদিন রাজপথে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আন্দোলনের নেতাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আত্মগোপনে চলে যান। সেদিন সারা দেশে অনেক ছাত্রুজনতা আহত ও নিহত হন। সেদিন রাতে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়। একইভাবে ১৯ জুলাই পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্রুজনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালায়। এতে অনেক ছাত্রুজনতা আহত ও নিহত হন।

জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৯ জুলাই তারা বুঝতে পারেন যে সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। তাদের আন্দোলনের এবং হতাহতদের কোনো খবর কোনো মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছিল না।

আজকের এই জবানবন্দি গ্রহণের পর আগামীকাল পরবর্তী অংশ গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। এর আগে এই মামলার সাক্ষী দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্য পরবর্তী আজকের জেরা শেষ হয়।

এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আলমামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ মহড়া
পরবর্তী নিবন্ধএবারের দুর্গাপূজা হবে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন উৎসব