বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যদের সঙ্গে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালান বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন এক কলেজছাত্র। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে সাক্ষ্য দেন চট্টগ্রাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ হাসান। আন্দোলন চলাকালে তিনি পিঠে গুলিবিদ্ধ হন বলে জানান এবং ট্রাইব্যুনালে গুলির চিহ্ন দেখান। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে হাসান ছিলেন ৩৭ নম্বর সাক্ষী। খবর বিডিনিউজের।
মোহাম্মদ হাসান বলেন, গত বছরের ৯ জুলাই থেকে তিনি চট্টগ্রাম নগরীর টাইগার পাস এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন সময়ে মুরাদপুর, নতুন ব্রিজ, চকরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
১৬ জুলাইয়ের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেদিন দুপুর ২টার দিকে তিনি বহদ্দার হাটের বাসা থেকে ১০ বন্ধুসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে মুরাদপুর যান। সেখানে বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে যুবলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, শৈবাল দাস সুমন, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরসহ আরও অনেকে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। রনির হাতে পিস্তল, হেলালের হাতে শটগান ও অন্যদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল বলে তিনি দাবি করেন। হাসান বলেন, গুলি চালানোর পর তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান এবং আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ষোলশহরের দিকে চলে যায়। তিনিসহ কয়েকজন মোহাম্মদপুরের একটি গলিতে আটকা পড়েন। সেখানে একটি বাসায় তারা আশ্রয় নেন। তখন আনোয়ার নামে একজন আন্দোলনকারীর মাধ্যমে জানতে পারি, আন্দোলনকারী ফয়সাল আহম্মেদ শান্ত মুরাদপুর এলাকায় গুলিতে নিহত হয়েছেন। ফয়সাল আহম্মেদ শান্ত হাসানের পূর্ব পরিচিত বলে জানান। ওই বাসায় থেকেই মহসীন কলেজের সমন্বয়ক বাপ্পী ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি, সন্ত্রাসীরা ওয়াসিম আকরাম নামের একজন আন্দোলনকারীকে মুরাদপুর রাস্তায় কুপিয়ে এবং ফারুক নামের এক কাঠ মিস্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছে। রে সন্ধ্যার দিকে তারা ওই বাসা থেকে বের হয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে যান বলে জানান হাসান। তনি আরও বলেন, সেদিন রাতে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফয়সাল আহম্মেদ শান্তর লাশ দেখতে গেলে পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ দেখতে দেয়নি।
এরপর তিনি চট্টগ্রাম নতুন ব্রিজ এলাকায় ১৮ জুলাইয়ের ঘটনার বিবরণ দেন। ১৮ জুলাই সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় পাঁচ–ছয়জন বন্ধুসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে অবস্থান কর্মসূচি ছিল। আনুমানিক দুই হাজার আন্দোলনকারী ছিলেন বলে তিনি জানান। আমাদের সামনে বাকলিয়া ও কর্ণফুলী থানার পুলিশ এবং তাদের পেছনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছিলেন। পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস শেল ছুঁড়লে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। আমরা কয়েকজন পাশের একটি ফিলিং স্টেশনের দিকে যাই। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সদস্যরা আমাদের লক্ষ্য করে শটগান দিয়ে গুলি করলে আমি পিঠে গুলিবিদ্ধ হই। আমার পিঠে ১১টি গুলি লেগেছিল। পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। সেখানে ডাক্তাররা আমার শরীর থেকে ৮টি শর্টগানের গুলি বের করেন, ৩টি গুলি এখনও আমার শরীরে রয়ে গেছে। এ সময় মোহাম্মদ হাসান তার পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ক্ষতচিহ্ন ট্রাইব্যুনালকে দেখান।
তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রথমে অ্যাম্বুলেন্সে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গেলে হাসপাতালের ফটকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ হাসপাতালে প্রবেশে বাধা দেয়। পরে একটি রিকশায় করে পার্কভিউ হাসপাতালে যান। ই হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দায়ী করেন এবং দোষীদের আইনানুগ শাস্তির দাবি করেন তিনি।











