লোহাগাড়ায় উদ্বোধনের আগেই একটি ব্রিজে ফাটল দেখা দিয়েছে, উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটেছে। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে তোলপাড় চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, ব্রিজটিতে নিন্ম মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে৷ ব্রিজটির নির্মাণ কাজ করেছে ‘মের্সাস চৌধুরী ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে উপ- ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করেছেন মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক একই উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন হেলালী।
বাস্তবায়নে দায়িত্বে ছিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তরা জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রাণালয়ের অধীন গ্রামীণ রাস্তায় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কুমিরাঘোনা বায়তুশ শরফ রোডে মহাবোধী বিহার সংলগ্ন খালের উপর বক্স কালভার্ট নির্মাণ বা ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ১৫ মিটার। ব্রিজটিতে ব্যয় কার হয়েছ ছিলো ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৫১ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, অনেক আগে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা থাকলেও ভরা বর্ষা মৌসুমে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। নানা ধরণের নিন্ম মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। পরিমাণ মতো সিমেন্ট কংক্রিট ও বালু না দিয়ে কোনো মতে নির্মাণ শেষ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। লোহাগাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ কেউ নির্মাণ কাজ তদারকি করেননি। নির্মাণ কাজে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করলেও কর্মকর্তারা আর্থিক সুবিধা নিয়ে কোন ধরণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
সোমবার (১ লা সেপ্টেম্বর) রাতে ব্রীজের সংযোগ সড়কে উভয় পাশে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করলে ব্রিজটির পশ্চিম পাশে ফাটল দেখা দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই নির্মাণ কাজের ঠিকাদারের শাস্তিও দাবি করেছেন।
স্থানীয়রা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, যে ব্রিজে উদ্বোধন বা গাড়ি চলাচল শুরুর আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে, সেই ব্রিজে আদৌ কি গাড়ি চলাচল সম্ভব? স্থানীয়রা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শাস্তির দাবির পাশাপাশি ব্রিজটি ভেঙে পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, দুই মাস আগে উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নে উদ্বোধনের আগে আরও একটি ব্রিজ উদ্বোধনের আগে ফাটল ধরে ধসে পড়ে। এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাক আহমেদ ও আব্দুর রহিম (সও) জানান, ব্রিজটি এখনও উদ্বোধন হয়নি। ফলে গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি। যখন গাড়ি চলাচল শুরু হবে তখন ব্রিজের কি অবস্থা হবে।
মেসার্স চৌধুরী ইন্টারন্যাশনাল এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালিক মোহাম্মদ হানিফ আজাদীকে বলেন, কাজটি আমি পেয়েছিলাম কিন্তু আমি জসিম উদ্দিন মেম্বারকে দিয়ে দিয়েছি। তিনিই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ করছেন। কোন সমস্যা হলে তিনি সমাধান করবেন।
লোহাগাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নাহিদ আহমেদ জাকির আজাদীকে বলেন, শুনেছি বড়হাতিয়া এলাকায় একটি ব্রিজ নিয়ে সমস্যা হয়েছে। ব্রিজটি ‘মের্সাস চৌধুরী ইন্টারন্যাশনাল বাস্তবায়ন করলেও তিনি দাবি করেন ‘মের্সাস মা এন্টারপ্রাইজ ‘ ব্রিজটি নির্মাণ করেছে। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।
ফাটলের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, ব্রিজটিতে সামান্য ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে এটি মূল ব্রিজে নয়। প্রয়োজনে এটি ঠিক করে দিব।
