সব ধরনের ফ্যাসিবাদ মোকাবেলায সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে দার্শনিক, পরিবেশবাদী ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, অনেক ধরনের ফ্যাসিবাদ আছে, ধর্মনিরপেক্ষতার ফ্যাসিবাদ, ধর্মান্ধতার ফ্যাসিবাদ সব ফ্যাসিবাদ মোকাবেলা করতে হবে। একইসাথে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করে জনগণের নিজস্ব গঠনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের প্রথম প্রয়োজন একটি গণমুখী গঠনতন্ত্র। জনগণকে বুঝাতে হবে গঠনতন্ত্র কী এবং কেন তা প্রয়োজন। যাতে দেশে আর কখনও ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে–সেই লক্ষ্যে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
চট্টগ্রামের গুরুত্ব ও বন্দরের নিরাপত্তা তুলে ধরে বলেন, চট্টগ্রাম হলো দেশের অর্থনীতির হৃদয়, যেখানে বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা রয়েছে। এ শহরের ক্ষতি মানে দেশের মারাত্মক ক্ষতি। এ কারণেই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন।
তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের দুর্নীতি দূরীকরণ এবং স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। বন্দরকে ঘুষ–দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে কাস্টমসকে বন্দর থেকে আলাদা করতে হবে। দুর্নীতি করার জন্য পণ্য দিনের পর দিন বন্দরে রেখে দেয় কাস্টমস কর্মকর্তারা। খেয়াল রাখতে হবে বন্দর যাতে বিদেশি স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়, বলেন তিনি।
ফরহাদ মজহার বলেন, চট্টগ্রাম হলো সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির অনন্য উদাহরণ। হাটহাজারীর মতো অঞ্চলে মসজিদ ও মন্দির পাশাপাশি অবস্থিত, যেখানে দুই সমপ্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে সমপ্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় এবং সামাজিক আচারে অংশ নিচ্ছেন। এই ঐতিহ্য যেন অক্ষুণ্ন থাকে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।
সংবিধান বনাম গঠনতন্ত্র, দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য নিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, গঠনতন্ত্র ও সংবিধান এক নয়। সংবিধান একটি আইনি কাঠামো মাত্র, যেখানে গঠনতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্র ও সংগঠন পরিচালনার মূল দর্শন। ড. কামাল হোসেন সংবিধানকে রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন, যা জাতির জন্য বিভ্রান্তিকর।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব ও দৈনিক আমার দেশের আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি বলেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবকে ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার একটি অংশ প্রেস ক্লাব থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের উচ্ছেদ করে। বর্তমানে এ ক্লাব দেশপ্রেমিক, পেশাজীবী সাংবাদিকদের আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত, চবি সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল হক, অধ্যাপক আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক সাইমা আলম, রাষ্ট্রচিন্তক মেজর (অব.) ফেরদৌস, কালের কণ্ঠের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মুস্তফা নঈম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, বাসস’র সিনিয়র সাংবাদিক মিয়া মোহাম্মদ আরিফ, দৈনিক এই বাংলার নির্বাহী সম্পাদক ওয়াহিদ জামান, বৈশাখী টিভির ব্যুরো প্রধান গোলাম মওলা মুরাদ প্রমুখ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।