ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই উপজেলা অংশেই গত ১২ দিনে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরো প্রায় ২০ জন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন, ১ বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা, ট্রেনের ধাক্কায় ৩ জন, ট্রেনে কাটা পড়ে ১ জন, ঝরনার কূপে ও বাড়ির পাশে গর্তের পানিতে ডুবে এক শিশুসহ ২ জন এবং সাপের কামড়ে একজন মারা গেছে। এসব মৃত্যুর অন্যতম কারণ বেপরোয়া গাড়ি চলাচল, অসচেতনতা ও বেপরোয়া চলাফেরা। সর্বাধিক মৃত্যুর ঘটনা সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটেছে। সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহলের মন্তব্য–মহাসড়কে গাড়ির সংখ্যা গত এক দশকে বেড়েছে অনেকগুণ। তাই ৪ লেনের সড়ক অন্তত আরো দ্বিগুন না হলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ৮ লেনে রূপান্তরিত করার প্রস্তাবনা কয়েক বছর থেকে হয়ে আসছিল। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে–সড়কে যানবাহন মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় উক্ত প্রস্তাবনা অবশেষে ১০ লেন করার প্রস্তাবনা ও নকশা চূড়ান্ত হয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেন বিশিষ্ট এ মহাসড়কটিকে আট লেনে উন্নীত করার নকশা গত বছর করা হয়েছিল। আট বছর আগে পুরোনো দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হলেও এরই মধ্যে সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করেছে এ মহাসড়কে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালেই এই মহাসড়ক দিয়ে দৈনিক যানবাহন চলার সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৩০ হাজারের ওপর। বর্তমানে এ সংখ্যা হয়েছে আরো দ্বিগুণ প্রায়। সড়ক ও জনপথের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, এই মহাসড়ককে ঘিরে আগামী ২০ বছরের যানবাহন চলাচলের সম্ভাব্যতা মাথায় রেখে করা হচ্ছে বর্তমান সমপ্রসারণের পরিকল্পনা। এর অংশ হিসেবে মহাসড়কটিকে ৪টি সার্ভিস লেনসহ দশ লেনে উন্নীত করা হবে। পাশাপাশি এই মহাসড়কের দুপাশে অবস্থিত ঘনবসতি, স্থাপনা, হাটবাজার ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি মাথায় রেখে মহাসড়কের কোনো অংশে ওভারপাস এবং কোনো অংশে টানেল নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, অর্থ বরাদ্দ পেলেই যে কোনো সময় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়ে যাবে।
জানা যায়, মহাসড়কটি ১০ লেন হলেও ১২ লেনের এঙপ্রেসওয়ের সুবিধা পাবেন ব্যবহারকারীরা। ইতোমধ্যে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গেও কথা চলছে বলে জানায় সড়ক বিভাগ। পরিকল্পনা বিভাগ ও অর্থায়ন বিভাগের চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে যা অর্থ বরাদ্দ প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
মীরসরাইয়ে নিহতের বৃহৎ অংশ সড়কে : গত ২৩ জুন সকালে বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় প্রদীপ কুমার দেন (৬৫) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এর আগে রোববার রাত ১২টায় উপজেলার জামালের দোকান এলাকায় তেলের ভাউচারের নিচ থেকে ১০ ঘণ্টা পর হাবিব উল্লাহ (৬০) নামে রোলার চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একইদিন সকালে উপজেলার ঠাকুরদিঘী এলাকায় চলন্ত লরির পেছনে ডাম্প ট্রাকের ধাক্কায় ডাম্পট্রাকের চালক ও তার সহকারী নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে করেরহাটে ফয়েজ আহম্মদ (৮৫) নামে এক বৃদ্ধের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায় নিজ ঘরে। ধারণা করা হচ্ছে সম্পত্তি সংক্রান্ত পারিবারিক কলহে তাকে খুন করে কেউ। ২১ জুন সর্প দংশনে জাহাঙ্গীর আলম (৫০) নামে এক পোষাক শ্রমিক মারা গেছে। ২০ জুন রাত ৯টায় উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকার ঢাকা–চট্টগ্রাম রেললাইনের আরশিনগর ফিউচার পার্ক এন্ড রিসোর্ট এর পাশে সোনার বাংলা ট্রেনের ধাক্কায় তিন বন্ধু নিহত হয়েছে। ১৯ জুন সকালে উপজেলার বাদামতলী এলাকায় গাছের চারা বিক্রি করতে যাওয়ার সময় কন্টেইনারবাহী লরির চাপায় মো. জয়নাল আবেদীন (৫৫) নামের এক নার্সারী মালিক নিহত হয়েছে। ১৭ জুন বিকেলে পূর্বাঞ্চল মীরসরাইয়ের উত্তর আমবাড়িয়া এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে ছোটন কুমার দে (২৫) নামে এক যু্বক নিহত হয়েছে। ১৬ জুন মীরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর গ্রামে ঘরের পাশে একটি গর্তের পানিতে ডুবে শারাফাত হোসেন রিফাত নামে তিন বছরের এক শিশু মারা যায়। ১৫ জুন দুপুরে উপজেলার বড় কমলদহ এলাকায় রূপসী ঝরনার কূপে গোসল করতে নেমে আসিফ উদ্দিন (২৪) নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। ১৪ জুন বারইয়ারহাট–রামগড় সড়কের চিনকীরহাট এলাকায় বালুবোঝাই পিকআপ ও টেঙির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে সাইফুল ইসলাম শাহিন (১৭) নামে এক কিশোর এবং হাসপাতালে নেয়ার পর সুমি আক্তার (২৫) ও তার ছেলে মানারুল (৩) নিহত হয়েছে।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মহাসড়কে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় কয়েকজন লোকজন মারা গেছেন। ঘুমের ঘোরে, বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও পথচারীদের অসচেনতার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা–সেমিনার করে যাচ্ছি।
