সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার ৪ দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। এদিকে গতকাল সোমবার রিমান্ড শুনানিতে তিনি দাবি করেন, নির্বাচন বিতর্কিত হলেও কমিশন দায়ী হতে পারে না।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে ‘জনগণের ভোট ছাড়া’ নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে বিএনপির করা মামলায় নূরুল হুদার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরে বাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য ১১টি কারণ আবেদনে তুলে ধরেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর এ নিয়ে শুনানিকালে সাবেক সিইসির কোনো বক্তব্য আছে কিনা জানতে চান বিচারক।
বিচারক তাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি শপথ ভঙ্গ করেছেন মনে করেন কিনা? উত্তরে নূরুল হুদা ‘না’ সূচক উত্তর দেন। বলেন, নির্বাচন কমিশনে পাঁচটা লোক এবং তাদের সহযোগিতা করার জন্য ১৬/১৭ লাখ লোকের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করা। ঢাকায় বসে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা কোথায় কেমন নির্বাচন হচ্ছে দেখার সুযোগ নাই। এরপর বিচারক আবারও তাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি তো শপথ নিয়েছেন নির্বাচন সুষ্ঠু করার। খবর বিডিনিউজের।
তখন নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচন হয়ে গেলে ফলাফল ঘোষণা হলে পরের সম্পূর্ণ এখতিয়ার হাই কোর্টের ওপর। হাই কোর্ট অনিয়ম পেলে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। নির্বাচন হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন সেটা বন্ধ করতে পারে না। এটা আদালতের উপর হস্তক্ষেপ হয়। পিপি সাহেব বলেছেন, নির্বাচনে টাকা দেওয়া হয়েছে এগুলোর সুযোগ নাই। নির্বাচন যেটা বিতর্কিত হয়েছে সেটার জন্য কমিশনকে দায়ী করা যায় না।
আধ ঘণ্টা পক্ষ–বিপক্ষের শুনানি শেষে আদালত সাবেক সিইসির রিমান্ড বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর করে চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এর আগে এদিন বিকাল ৩টার দিকে নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। রিমান্ড শুনানিকালে ৪টা ১০ মিনিটের দিকে তাকে এজলাসে তোলা হয়।
কাঠগড়ায় উঠে দুই হাত পিছনে নিয়ে দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। তার রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি শুরু হলে তিনি কাঠগড়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের বক্তব্য শোনেন।
এদিকে কে এম নূরুল হুদাকে কথিত ছাত্র–জনতার হেনস্তার ঘটনায় সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই বলে মনে করছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র আসক। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আসক বলেছে, শুধুমাত্র ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে জুন পর্যন্ত এ ধরনের অরাজকতায় উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে কমপক্ষে ৮৩ জন মানুষ নিহত হয়েছেন, যা একটি সভ্য রাষ্ট্রে ঘোরতর নৈরাজ্যের ইঙ্গিত বহন করে।
নুরুল হুদার প্রতি মব জাস্টিসের নিন্দা রিজভীর : বাংলানিউজ জানায়, সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে অসদাচরণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি এ ঘটনাকে ‘মব জাস্টিস’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
আগের দিন রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। এ মামলার আসামি হওয়ার ৬ ঘণ্টা পর জনতা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উত্তরার বাসা থেকে আটক করে নূরুল হুদাকে। আটকের সময় তারা তার ওপর চড়াও হয়। বাসায় ঢুকে অপদস্থ করা হয়। পরে পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়ে মিন্টো রোডে ডিবি অফিসে নিয়ে যায় এবং শেরে বাংলা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।