যুক্তরাষ্ট্রের হামলা অমার্জনীয়, জবাব দেবে ইরান : আরাগচি

| সোমবার , ২৩ জুন, ২০২৫ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

ওআইসির এক সভায় যোগ দিতে তুরস্কের ইস্তানবুলে অবস্থান করছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। তিনি সেখানে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের ‘গুরুতর লঙ্ঘন’ এবং তা ‘অমার্জনীয়’। এক সাংবাদিক জানতে চান, হামলার পরও কূটনীতির অবকাশ রয়েছে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে নয়। কূটনীতির দরজা সবসময় খোলা থাকা উচিত, কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়।’

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার দেশ এখন আক্রমণ, আগ্রাসনের মুখে রয়েছে এবং আত্মরক্ষার বৈধ অধিকার অনুযায়ী জবাব দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবাজ ও আইনের তোয়াক্কা না করা প্রশাসন এই আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিপজ্জনক পরিণতির জন্য একক ও সম্পূর্ণভাবে দায়ী থাকবে। জাতিসংঘের এক সদস্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর মার্কিন সামরিক হামলাগণহত্যাকারী (ইসরায়েলি) সরকারের সহযোগিতায় সংঘটিত হয়েছে, যা আবারও প্রমাণ করেযুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ ইরানি জনগণের প্রতি কতটা বৈরী। আমরা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেব না।’

যেভাবে জবাব দিতে পারে ইরান : পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় এরই মধ্যে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, মার্কিন হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার অধিকার রাখেন তারা।

বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিবেদক ফ্রাঙ্ক গার্ডনার মনে করছেন, ইরানকে এখন তিন কৌশলের মধ্যে একটি বেছে নিতেই হবে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, কিছুই না করা। তেহরান যদি এখন ওয়াশিংটনের হামলার জবাবে কিছুই না করে তাহলে ট্রাম্পের আরও হামলা থেকে মুক্তি পাবে। এবং এই সূত্রে কূটনৈতিক চ্যানেলে আলোচনাও জোরদার হতে পারে। কিন্তু এমন ক্ষেত্রে ইরানের শাসনব্যবস্থাকে ভয়ানক দুর্বল দেখাবে। এতদিন ধরে তারা তাদের ওপর হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে জবাব দেওয়ার যেসব হুমকিধামকি দিয়ে আসছিল, সেগুলোকে মনে হবে ‘অক্ষমের আস্ফালন’; মধ্যপ্রাচ্যে অন্যান্য দেশে তাদের প্রভাবও ‘নাই’ হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় যে বিকল্প এখন ইরানি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনির হাতে আছে, তা হলদ্রুত ও কঠোর পাল্টা আঘাত। ইসরায়েলের এত এত হামলার পরও ইরানের হাতে এখনও বিপুল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকার কথা। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে থাকা ২০টির মতো মার্কিন ঘাঁটিকে নিশানা করতে পারে তারা। ড্রোন এবং দ্রুতগতির টর্পেডো নৌযান দিয়ে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে ‘ঝাঁক বেঁধে আক্রমণ’ চালাতে পারে তারা।

গার্ডনারের মতে, এখন শেষ যে বিকল্পের কথাও ইরান ভাবতে পারে, তা হল সময় নেওয়া। পাল্টা আঘাত তারা করবে নিজেদের বেছে নেওয়া সময়ে। তারা এখনকার উত্তেজনা থিতিয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করতে পারে, এবং এমন এক সময়ে হামলা চলাতে পারে যখন মার্কিন ঘাঁটিগুলো সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার কথা ভাববে না।

ইরান এবং অঞ্চলজুড়ে এর মিত্র বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী গত কয়েকদিন ধরে বারবার যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেছিল, ইরানইসরায়েল সংঘাতে ওয়াশিংটন জড়ালে তারা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানবে।

দীর্ঘ সংঘাতের সূচনা : ক্লিনটন, বুশ ও ওবামা প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা ডেভিড ফিলিপস মনে করছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় ট্রাম্পের নির্দেশের ধারাবাহিকতায় ইরানও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটি ও স্বার্থে পাল্টা আঘাত হানবে। আল জাজিরাকে অঙফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভিজিটর ফিলিপস বলেন, ‘ট্রাম্প কূটনীতিকে সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ সময় দেওয়ার কথা বলেছিলেন। মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র লাফ দিয়ে বন্দুক ধরে ট্রিগারে চাপ দেওয়ার এবং যে কোনো মূল্যে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং মার্কিন বাহিনীর ওপর পাল্টা আঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়েছে, কাছাকাছি এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ হাজারের মতো সেনা রয়েছে।’ তার মতে, ‘পারসিয়ান গর্বের গুরুত্বকে’ খাটো করে দেখলে ভুল করবে যুক্তরাষ্ট্র। তার ভাষায়, ‘এখন ইরান আক্রান্ত হয়েছে, কেবল ইসরায়েলের হাতে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের হাতেও। ইরান প্রতিশোধের পথ খুঁজবে, এবং তাদের মনোযোগ মূলত থাকবে মধ্যপ্রাচ্য, লোহিত সাগরে থাকা মার্কিন সেনা ও অন্যান্য আমেরিকান স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়।’ মার্কিন হামলা ‘দীর্ঘ সংঘাতের সূচনা’ করল বলেই আশঙ্কা তার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ আরো বাড়িয়ে বাজেট অনুমোদন
পরবর্তী নিবন্ধআলোচনার টেবিলে আসো, না হলে আরো বড় হামলা হবে